রেজওয়ান শরিফ, টাঙ্গাইল

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

টাঙ্গাইলে এক বছরে শতাধিক দুর্ঘটনা

নিহত শতাধিক, আহত প্রায় দ্বিগুণ

নতুন বছরে পদার্পন করে বিভিশিখার মতো মনে ভেসে উঠে গেল বছর টাঙ্গাইলে সড়ক দুর্ঘটনা। গত বছরে শতাধিক দূর্ঘটনায় প্রতিটিতে এক বা একাধিক যাত্রী নিহত হয়ে। এছাড়া আহত হয়েছে অন্তত দুই শতাধিক। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কে। তবে পৃথক জরিপে হতাহতের পরিসংখ্যানে তারতম্য পরিলক্ষিত হলেও দুর্ঘটনার মাত্রা আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব দুর্ঘটনার কারণ এবং দুর্ঘটনা রোধের বিষয়টি বের হয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের একটি পত্রিকার জরিপ অনুযায়ী গত বছরে মোট ৫২টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় ৭৯জন নিহত হয়। আহত হয় অন্তত দেড় শতাধিক। অপরদিকে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছর ১২০টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় ৩১জনকে ঘটনাস্থলেই নিহত ও আড়াইশ’র উপরে আহত হিসেবে সনাক্ত করা হয়। তবে এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত ব্যক্তির তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়াও জেলা পুলিশ বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে ১২৫ টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। এসব দুর্ঘটনায় ১১৪ জন নিহত, ১৫৮ জন আহত হয়। দুর্ঘটনার বিপরীতে মামলা দায়ের হয় ১০৬টি। এসব দুর্ঘটনার অধিকাংশই সংঘটিত হয় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে।

সরেজমিন পরিদর্শন এবং পরিবহন মালিক, চালক, যাত্রী ও বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার কারণ এবং রোধের বিষয়গুলো বের হয়ে এসেছে।

‘সকাল সন্ধ্যা’ পরিবহনের মালিক সোহেল তালুকদার বলেন, মহাসড়কটি দুই লেনের এবং ভাঙা-চোরা। এর মধ্যে চারলেনের কাজ চলায় দুর্ঘটনা ও যানজটের মাত্রা বেড়ে গেছে। এতে একদিকে সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা মালিক-শ্রমিক ও যাত্রীরা সবাই ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছি। মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এর থেকে পরিত্রাণ সম্ভব হতে পারে।

ট্রাক চালক তায়েব আলী জানান, অনেক চালক তাদের সহকারির হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেয়। এত ঝুঁকিপূর্ণ একটি মহাসড়কে তুলনামুলক অনভিজ্ঞ চালকরা গাড়ি চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আবার অনেক সময় নিয়ম-কানুন না বুঝে আইন ভঙ্গ করে জেল-জরিমানার শিকার হয়।

যাত্রীরা জানান, এমনিতেই মহাসড়কটি অনেক সরু। এই সড়কে প্রতিযোগিতা করে অথবা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাতে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, নয়তো যানজটের কবলে পড়তে হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই টাঙ্গাইল শাখার আহ্বায়ক ঝা-া চাকলাদার বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক। এখানে যে ধরণের সড়ক ব্যবস্থা থাকার কথা তা নেই। অদক্ষ্য চালক আর সড়কের বেহাল দশার কারণে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ও যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই এটিকে নিরাপদ রাখতে সরকারকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারি পরিচালক (এডি) মো. মনির হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ও হতাহতদের সাহায্যার্থে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধে আমরা সচেতনতামুলক কাজ করে থাকি। এই মহাসড়কটি অন্যান্য মহাসড়কের তুলনায় ব্যস্ততম একটি মহাসড়ক হওয়ায় এখানে দুর্ঘটনাও ঘটে বেশি। তাই আমাদের কাজের চাপও থাকে বেশি। টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, উত্তরবঙ্গের গেটওয়ে হিসেবে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। দুই লেনের মহাসড়কে ২৪টি জেলার বিপুল সংখ্যক গাড়ির চাপ সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও দুর্ঘটনা রোধে আমাদের ২৪টি মোবাইল টিম দিনরাত কাজ করে। এছাড়াও রয়েছে মোটরসাইকেল মোবাইল টিম। চারলেনের কাজটি দ্রুত শেষ হলে আমাদের জন্য সুবিধা এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist