ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ১৯ মার্চ, ২০২৩

সমালোচনার জবাব মাঠে দিলেন সাকিব

সাকিব-হৃদয়ের আক্ষেপে রেকর্ড পুঁজি বাংলাদেশের

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। খেলার ভেন্যু সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রতিপক্ষকে বড় লক্ষ্য দিয়েছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন স্বাগতিকরা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছে। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এটাই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের রেকর্ড ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২০১৯ বিশ্বকাপে। ওই ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান তুলেছিল টাইগাররা। কিছু দিন হলো সাকিবকে নিয়ে মাঠে বাইরে দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় নেট দুনিয়া। যেটার জবাব সাকিব মাঠে দিলেন নিন্দুকদের।

সাকিব আল হাসানের পর তৌহিদ হৃদয়ও পারেননি সেঞ্চুরি করতে। তিনিও আশা জাগিয়ে সাজঘরে ফেরেন নড়বড়ে নব্বইতে। তাকে বোল্ড করে তৃতীয় উইকেটে দেখা পান হিউম। ফুল লেংথের ডেলিভারি লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় স্টাম্প হারান তিনি। অভিষিক্ত হৃদয় আলো কেড়ে থামেন ৯২ করে। পাঁচে নেমে ৮৫ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৮ চার ও ২ ছক্কা। সেঞ্চুরি না পেলেও ওয়ানডে অভিষেকে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড গড়েন তিনি। আগের কীর্তি ছিল ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নাসির হোসেনের ৬৩। ৩ বলের মধ্যে স্কোর বোর্ডে ১ রান যোগ করতে ২ উইকেট পড়ে বাংলাদেশের। ৪৬ ওভারে ২৯৬ রানে ৫ ও ২৯৭ রানে ৬ উইকেট হারায় তারা।

গ্রাহাম হিউমের দ্বিতীয় শিকার হন মুশফিকুর রহিম। কাটারে পরাস্ত হয়ে অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইনকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ২৬ বলে সমান ৩টি করে চার ও ছয়ে তার সংগ্রহ ৪৪ রান। তার স্ট্রাইক রেট ১৬৯.২৩। ছয়ে নেমে মুশফিক খেলেন সময়োপযোগী ইনিংস। দলের শক্ত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান আনেন। হৃদয়ের সঙ্গে তার ৫ উইকেট জুটিতে আসে ৮০ রান। সেজন্য তাদের খেলতে হয় মাত্র ৪৯ বল। ঝড় তোলার মঞ্চ ছিল তৈরি। সাকিবের বিদায়ের পর ছয়ে নেমে মুশফিক সেই সুযোগ লুফে নেন। ক্রিজে গিয়েই শুরু করেন আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ততক্ষণে ফিফটি তুলে নেওয়া হৃদয়ও যোগ দেন প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হওয়ায়।

৩২ বলে জুটির রান স্পর্শ করে ৫০। সেখানে মুশফিকের ভূমিকা অগ্রণী। নিয়মিত চার-ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ তিনশর দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। ফিফটি স্পর্শ করার পর উড়ছিলেন সাকিব আল হাসান। উত্তাল হয়ে ওঠে তার ব্যাট। হ্যারি টেক্টরের করা ৩৬ ওভারে মারেন ৫ চার। সব মিলিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২২ রান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সংগ্রহ পেরিয়ে যায় ২০০ রান। তবে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি শেষ পর্যন্ত পাওয়া হয়নি সাকিবের। ৯৩ রানে থামেন তিনি। তার ৮৯ রানের ইনিংসে ছিল ৯ চার। হিউমের ওয়াইড ইয়র্কারে উইকেটরক্ষক লরকান টাকারের গ্লাভসবন্দি হন তিনি।

সাকিবের আউটে ভাঙে হৃদয়ের সঙ্গে তার ১২৫ বলে ১৩৫ রানের জুটি। ৩৮ ওভারে ২১৬ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওয়ানডে অভিষেকে পাঁচে নেমে ফিফটি পান ২২ বছর বয়সি তৌহিদ হৃদয়। পেসার গ্রাহাম হিউমের করা ৩৬ ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি পৌঁছান ব্যক্তিগত মাইলফলকে। ৫৫ বলে ৫ চারে ফিফটি আসে তার ব্যাট থেকে। বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক ওয়ানডেতে ফিফটি করেন হৃদয়। তার আগে এই অর্জন ছিল ফরহাদ রেজা ও নাসির হোসেনের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখা হৃদয় এবার সেই তালিকায় যুক্ত হন।

৮১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে দলীয় শতরানের আগে তামিম ইকবাল, লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর সাজঘরে ফেরার ধাক্কাকে জেঁকে বসতে দেননি সাকিব ও হৃদয়। তাদের কল্যাণে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। সাকিব ব্যাট হাতে দায়িত্বশীল ভূমিকায় আছেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন অভিষিক্ত হৃদয়। দুজনের মধ্যকার চতুর্থ উইকেট জুটি ৩৪ ওভারে স্পর্শ করে শতরান। হিউমের ডেলিভারি ডিপ মিড উইকেটে মেরে সাকিব ডাবল নিলে ১০৩ বলে পূর্ণ হয় জুটির সেঞ্চুরি। ফিফটির হ্যাটট্রিক করেন ৩৫ বছর বয়সি তারকা সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ৩০ ওভারে কার্টিস ক্যাম্ফারের বল কাট করে সিঙ্গেল নিয়ে ব্যক্তিগত মাইলফলকে যান তিনি। মাঠের বাইরের একটি ঘটনায় আলোচনায় থাকা বাঁহাতি ব্যাটারের এটি ৫৩ ওয়ানডে হাফসেঞ্চুরি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন সাকিব। তার ব্যাট থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৫৮ ও ৭৫ রান। এদিন চারে নেমে তিনি হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৬৫ বলে, মাত্র ২ চারের সাহায্যে। কিছুটা চাপে পড়া দলের হাল ধরেন সাকিব ও হৃদয়। রানের চাকা সচল রাখার কাজও দারুণভাবে করেন তারা। ফলে বড় সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত পায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৫০ রান আসে ৫৭ বলে। ইনিংসের ২৬ ওভারের শেষ বলে ম্যাকব্রাইনকে লংঅফে উড়িয়ে মারেন ব্যাট হাতে ছন্দে থাকা সাকিব। ক্যাচের আওয়াজ উঠলেও বল পড়ে যায় বিপদ ঘটার আগে। সাকিব ও হৃদয় দৌড়ে সিঙ্গেল নিলে জুটির রান স্পর্শ করে ৫০।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলেন সাকিব। ২২৮ ওয়ানডেতে এসে ২১৬ ইনিংসে এই অর্জনে পৌঁছান শীর্ষ টাইগার তারকা। ৭ হাজারে অধিনায়ক তামিম পৌঁছেছিলেন ২০৪ ইনিংস। সাকিবের লাগে ১২ ইনিংস বেশি। মাইলফলকের কাছে সাকিব চলে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের সিরিজে। এই ম্যাচে তার দরকার ছিল ২৪ রান। লিটনের আউটের পর ইনিংসের ১০ ওভারে ক্রিজে আসেন সাকিব। মুখোমুখি হওয়া ৩৩ বলে সিঙ্গেল নিয়ে পৌঁছান ৭ হাজারে। লিটনের মতো থিতু হয়ে সাজঘরে ফেরেন শান্ত।

যেভাবে সাকিবের ৭০০০ রান

১-১০০০ রান (৩৮ ইনিংস)

১০০০-২০০০ রান (৩১ ইনিংস)

২০০০-৩০০০ রান (৩৬ ইনিংস)

৩০০০-৪০০০ রান (৩১ ইনিংস)

৪০০০-৫০০০ রান (৩২ ইনিংস)

৫০০০-৬০০০ রান (২২ ইনিংস)

৬০০০-৭০০০ রান (২৬ ইনিংস)

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close