ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

মেহেদীতে রাঙল রংপুর

দ্রুত ৩ উইকেট হারানোর চাপ সামলে দেড়শ ছুঁইছুঁই পুঁজি পেল ঢাকা ডমিনেটর্স। এর পেছনে দলটির মূল কারিগর হাফসেঞ্চুরিয়ান উসমান ঘানি। মাঝারি পুঁজি নিয়ে তাদের বোলাররা লড়াই করলেও শেষরক্ষা হলো না। শেখ মেহেদী হাসানের আগ্রাসী ফিফটিতে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিল রংপুর রাইডার্স।

বিপিএলে সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে জিতেছে রংপুর। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৪৪ রান তোলে ঢাকা। জবাবে ৬ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে ১৪৬ রান করে জয় নিশ্চিত করে রংপুর। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা শেখ মেহেদী ৭২ রান করেন। ৪৩ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৬ চার ও ৫ ছক্কা। এছাড়া, বল হাতে তিন ওভারে মাত্র ১৩ রানে ১ উইকেট দখল করেন তিনি।

আগের ম্যাচগুলোয় বোলিং মোটামুটি করলেও ব্যাট হাতে মেহেদী ছিলেন একদমই নিষ্প্রভ। তারপরও তাকে টপ অর্ডারে খেলিয়ে গেছে দল। অবশেষে তিনি প্রতিদান দিলেন। আগের সাত ইনিংস মিলিয়ে তার রান ছিল ৭১। এবার এক ইনিংসেই ছাড়িয়ে গেলেন আগের সব ম্যাচকে। দলকেও এনে দিলেন জয়। আট ম্যাচে রংপুরের এটি পঞ্চম জয়, নবম ম্যাচে ঢাকার সপ্তম পরাজয়।

টসের সময় ঢাকা অধিনায়ক নাসির হোসেন বলেছিলেন, ১৬০-১৭০ রান এই উইকেটে ভালো হতে পারে। কিন্তু সেই স্কোরে পৌঁছানোর মতো স্কিল, মানসিকতা কিংবা তাড়না, কোনোটাই দেখা গেল না তার দলের ব্যাটিংয়ে। একপ্রান্ত আগলে রাখা উসমান ঘানি শেষ দিকে একটু দ্রুত রান তুলে ৫৫ বলে ৭৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে কিছুটা ভদ্রস্থ পর্যায়ে নিয়ে যান দলকে।

টস জিতে বোলিংয়ে নামা রংপুরকে আবারও ভালো শুরু এনে দেন আজমতউল্লাহ ওমারজাই। আগের ম্যাচে এক ওভারে তিন উইকেট নিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ধসিয়ে দেওয়া আফগান পেসার নতুন বলে জ্বলে ওঠেন আবার। দুর্দান্ত সুইং বোলিংয়ে তিনি ফেরান ঢাকার দুই ওপেনারকে। বাতাসে সুইং করে অনেকটা ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি পিচ করে আরো ঢুকে ছোবল দেয় স্ট্যাম্পে, ঠিকমতো বুঝতেও পারেনি ব্যাটসম্যান মিজানুর রহমান (৫)। আগের ম্যাচে ফিফটি করা সৌম্য সরকার এবার ১১ রানে আউট হন ওমারজাইয়ের সুইংয়ের জবাব না পেয়ে। আরেকপ্রান্তে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ব্যাটসম্যানদের আটকে রেখেছিলেন শেখ মেহেদি হাসান। তার সøাইডার সামলাতে ব্যর্থ হয়ে বোল্ড হন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ব্লেইক (৪)। ৫ ওভার শেষে ঢাকার রান তখন ৩ উইকেটে ২৮।

চতুর্থ জুটিতে সে ধস থামান উসমান ঘানি ও মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু প্রাণহীন ব্যাটিংয়ে দুজনের কেউই পারেননি দ্রুত রান তুলতে। ৪১ রানের জুটিতে বল লাগে ৩৭টি! ১৫ বলে ১৪ রান করে মিঠুন বোল্ড হয়ে যান রাকিবুল হাসানকে বাজেভাবে সøগ করতে গিয়ে। রানের গতি একটু বাড়ে পরের জুটিতে। ঘানি ও নাসিরের জুটিতে রান আসে ৪৫ বলে ৫৫। ১৫ ওভার শেষে ঘানির রান ছিল ৩৭ বলে ৩৮। পরে তার ও নাসিরের ব্যাটে একটু দ্রুত রানের তাড়া দেখা যায়। নাসির ২২ বলে ২৯ করে রান আউট হয়ে যান। ঘানি শেষ দিকে রউফের আলগা বল কাজে লাগিয়ে দলকে দেড়শর কাছাকাছি নিয়ে যান।

হারিস রউফ ছাড়া রংপুরের সব বোলারই বেশ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। শেষ ২ ওভারে ৩২ রানসহ রউফ ৪ ওভারে দেন ৪৯ রান। চতুর্থ ওভারে সালমান ইরশাদের দুটি আলগা বলে চার মারেন রনি। পরের ওভারে আফগান বাঁহাতি স্পিনার আমির হামজা হোতাকের বলে দুটি চারের পর ইনসাইড আউটে ছক্কায় ওড়ান মেহেদি। আরেকটি ছক্কা পান তিনি আল আমিন হোসেনের শর্ট বলে পুল করে। একটু পর অভিজ্ঞ এই পেসারের বলই ছয়ে ভাসান তিনি ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলে।

রনির রানের গতি যদিও কমে গিয়েছিল। হামজাকে টানা দুটি চার মেরে তিনি গা ঝাড়া দেন। পরের বলেই হামজা শোধ তোলেন রনিকে (২৮ বলে ২৯) ফিরিয়ে। জুটি থামে ৪২ বলে ৬৩ রানে। পরের ওভারে শোয়েব মালিককে ফেরায় ঢাকা দারুণ পরিকল্পনা করে। তার জন্য গালিতে ফিল্ডার রেখে স্ট্যাম্পের বাইরে ফুললেংথ বল করেন সালমান ইরশাদ। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান পা দেন সে ফাঁদেই। পরে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান অল্পতেই ফেরেন সৌম্য সরকারের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে।

তবে আরেকপ্রান্তে মেহেদি ছুটতে থাকায় রান রেটের চাপে কখনোই পড়তে হয়নি রংপুরকে। টি-টোয়েন্টিতে সপ্তম ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি ৩১ বলে। তাতে ৪০ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। ফিফটির পরও দলকে এগিয়ে নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৬ চার ও ৫ ছক্কায় ৭২ করে তিনি ফেরেন আল আমিনের বলে। জয় তখন নাগালেই। মোহাম্মদ নাওয়াজ ও ওমারজাই মিলে শেষ করেন কাজ। শেষের আগের ওভারে ইরশাদের বলে ওমারজাইয়ের দুই চার ও নাওয়াজের ছক্কায় শেষ হয় ম্যাচ। ঢাকার হয়ে তাসকিন প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ৭ রান দেওয়ার পর অনেকক্ষণ বোলিং করতে পারেননি, হয়তো কোনো চোট সমস্যা। পরে ফিরে একটি ওভার করলেও শতভাগ দিতে পারেননি বলেই মনে হয়েছে। তবে দিনশেষে, যথেষ্ট পুঁজিই ছিল না তাদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা ডমিনেটর্স : ২০ ওভারে ১৪৪/৫

রংপুর রাইডার্স : ১৯ ওভারে ১৪৬/৫

ফল : রংপুর রাইডার্স ৫ উইকেটে জয়ী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close