আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৬ আগস্ট, ২০১৯

কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী গৃহবন্দি, ১৪৪ ধারা জারি

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় উত্তেজনা বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাহকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। এছাড়া গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে রাজ্যের শীর্ষ নেতা সাজাদ লোনসহ একাধিক নেতাকে। গত রোববার রাত থেকে তাদের গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

এদিকে গত রোববার গভীর রাত থেকে শ্রীনগরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে জানানো হয়। এর জের ধরে কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হলো।

এরই মধ্যে গৃহবন্দি হওয়া মেহবুবা মুফতি এক টুইট বার্তায় জানান, যারা উপত্যকার শান্তির জন্য লড়াই করছেন, সেই জনপ্রতিনিধিদের গৃহবন্দি করে বিদ্রƒপ করছে কেন্দ্র। এছাড়া গৃহবন্দি হওয়া ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যবাসীকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

রাজ্যের তিন মুখ্য রাজনীতিবিদকে গৃহবন্দি করে রাখায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। তিনি বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মীরের নেতাদের গৃহবন্দি করে রাখার অর্থ, সরকার সব গণতান্ত্রিক নিয়ম ও আদর্শকে অবহেলা করে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাচ্ছে।’

এদিকে কাশ্মীর উত্তেজনা নিয়ে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় আয়োজন করা হয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দিল্লির ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ প্রমুখ।

এদিকে উত্তেজনার মধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরের বহু এলাকার মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন ফোনের পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট ও কেবল টিভি পরিষেবাও। রাজ্যের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে একসঙ্গে অনেক মানুষের জমায়েত ও জনসভা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন ফোনের পরিষেবা বন্ধ রাখায় শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের স্যাটেলাইট ফোন দেওয়া হয়েছে। তারা এই ফোনের মাধ্যমে কেন্দ্রের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে আলোচনা করতে পারবেন।

এদিকে জম্মু, কিশত্বার, রেসাই, ডোবা ও উধমপুর জেলার স্কুল-কলেজগুলো গতকাল সোমবার থেকে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

গত সপ্তাহ থেকেই রাজ্যে অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। গত শুক্রবারই অমরনাথ তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এসব পদক্ষেপ থেকে রাজ্যের ‘স্পেশাল স্ট্যাটাস’ বদলানোর চেষ্টা হতে পারে। এই ইস্যুটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কারণ, এর সঙ্গে রাজ্যের বাসিন্দাদের অধিকারের বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে।

এর আগে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় কাশ্মীরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি পর্যটক থেকে শুরু করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান অমরনাথ যাত্রীদের প্রত্যেককেই কাশ্মীর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অন্তত ২০ জন পাকিস্তানি জঙ্গির দল ভারতীয় সেনার ওপরে বড় ধরনের একটি হামলার ছক কষছিল। এর মধ্যে গত শনিবার পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিমের (বিএটি) পাঁচ সদস্য ভারতে ঢুকে পড়ে কেরান সেক্টরের একটি ফরওয়ার্ড পোস্টে হামলার চেষ্টা চালায়। অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্তরেখা পেরিয়ে একটি ভারতীয় ঘাঁটির খুব কাছে পৌঁছে যায়। কিন্তু হামলা চালানোর আগেই ভারতীয় সেনারা গুলি করে তাদের হত্যা করে।

নিহতদের লাশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে জানালেও তারা এখনো সাড়া দেয়নি বলে দাবি ভারতীয় সেনাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close