ডা. মো. আহাদ হোসেন

  ০৭ এপ্রিল, ২০২১

সাম্প্রতিক সময়ে কোভিডের লক্ষণগুলো ও করণীয়

সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড সিচুয়েশন অনেকটাই বেড়ে গেছে। এটি বোঝার জন্য খুব সহজ কৌশল হচ্ছে যারা আমরা বিভিন্ন সময়ে কোভিডসার্ভিস দিয়ে আসছিলাম তাদের টেলিফোনগুলো সচল হয়ে যাওয়া, অনেক বেশি টেলিফোন আশা, হাসপাতালগুলোর আইসিইউ গেট পরিপূর্ণ থাকা, হসপিটালে রোগী ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত সিট না থাকা। এগুলোর প্রত্যেকটি সাম্প্রতিক সময়ে ঘটছে প্রতিনিয়ত। আজকে লিখব বর্তমান কোভিড সিচুয়েশনে লক্ষণগুলোর সঙ্গে আগের লক্ষণগুলোর পার্থক্য কী?

এখনকার সময়ে আমরা যে লক্ষণগুলো বেশি পাচ্ছি সেটি হচ্ছে

জ্বর : জ্বরের প্রকৃতি স্বল্প থেকে শুরু এবং তীব্র জ্বর হয়ে থাকে এবং এই জ্বর কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। কারো কারো ক্ষেত্রে ৭ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত জ্বর থেকে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তারা ভীত হচ্ছেন এবং হাসপাতলে ভর্তি হচ্ছেন।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া : এখন আমরা বেশ টেলিফোন পাচ্ছি এবং হসপিটালে রোগীদের দেখছি যে তাদের শুরুতেই জ্বরের সঙ্গে বমি বমি ভাব বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক বমি হওয়ার লক্ষণ রয়েছে এবং একই সঙ্গে পানিশূন্যতা হচ্ছে। পরে তিনি প্রেশার কমে দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন এবং দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

মাথাব্যথা ও শরীর ব্যথা : জ্বর ও বমি বমি ভাবের সঙ্গে প্রচন্ড মাথাব্যথা অনেক রোগী আমাদের বলছেন। মাথাব্যথা মাথার সামনে এবং পেছনে থেকে হচ্ছে।

ডায়রিয়া বা লুজ মোশন : ডায়রিয়া বা লুজ মোশন আমরা আগেও পেয়েছি কিন্তু তা খুব বেশি না। এখন অনেকেই এ সমস্যাটি বলছেন যে তাদের বারবার বাথরুম হচ্ছে এবং লিকুইড যাচ্ছে।

শ্বাসকষ্ট ও এর প্রকৃতি : শ্বাসকষ্ট আগেও হয়েছে এখনো হচ্ছে এই রোগে। কিন্তু এখনকার সময়ে শ্বাসকষ্ট খুব কম কিন্তু সেচুরেশন অনেক নেমে যাচ্ছে। আবার যাদের বিভিন্ন রোগজনিত সমস্যা আছে যেমন উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট খুব একটা নেই কিন্তু সেচুরেশন ৮০-এর নিচে নেমে যাচ্ছে।

বয়সের ভেদ : বিভিন্ন বয়সের রোগী এখন আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এখন আমরা বাচ্চাদের আক্রান্ত হওয়া খুব বেশি পাচ্ছি না। তরুণদের মধ্যে আগে আক্রান্তের হার কম ছিল। এখন ৩০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে আমরা বেশ রোগী পাচ্ছি। তবে তরুণদের মধ্যে আক্রান্ত হলেও তার আবার সুস্থ হচ্ছে।

বর্তমান অবস্থায় করণীয় কী?

১. প্রথমত ভয় পাওয়া যাবে না। কোভিড আগেও যেমন ছিল এখনো আছে। কোভিডের প্রকৃতি চিনতে হবে, লক্ষণ প্রকাশ হওয়া মাত্রই দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে। যত দ্রুত রোগ শনাক্ত করা যাবে তত দ্রুতই চিকিৎসা শুরু করা যাবে। চিকিৎসা প্রকৃতি নিয়ে আগের লেখায় বিস্তারিত বলেছি সেগুলো খেয়াল করে দেখুন। ভয়ের কারণে অনেকেই খুব দ্রুতই অসুস্থ হয়ে যান এবং হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

২. রোগ শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলাদা হয়ে যাওয়া খুবই জরুরি। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে সেটা বাসায় হোক বাইরে হোক। মাস্ক ব্যবহারের ন্যূনতম শিথিলতা প্রদর্শনের কারণে আমি নিজেও ইনফেকটেড হয়েছি। যদিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি এখন পর্যন্ত তারপরও আমি মনে করছি, মাস্কের শিথিলতার কারণেই ইনফেকশনগুলো ছড়াচ্ছে।

৩. স্বল্প ও মৃদু লক্ষণ হলে নির্বিঘ্নে বাসায় চিকিৎসা নিতে পারেন। এ ব্যাপারে বিস্তারিত ইনস্ট্রাকশন আগের লেখায় দিয়েছি।

৪. বাসায় রোগের ফলোআপের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পালস অক্সিমিটার। এই যন্ত্রটি অবশ্যই অবশ্যই সবার বাসায় একটি করে সংগ্রহে রাখতে পারেন।

৫. যাদের স্যাচুরেশন ৯০-এর নিচে নেমে যাবে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করানো দরকার হতে পারে। অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আরো কিছু লক্ষণ আছে যেমন জ্বর নিয়ন্ত্রণে না আসা, অত্যাধিক জ্বর, ডায়রিয়া বা লুজ মোশন, বমি, অত্যাধিক দুর্বল হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট বা কাশি নিয়ন্ত্রণে না থাকা।

৬. যারা এখনো আক্রান্ত হননি কিন্তু বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে। অবশ্যই তারা মাস্ক ব্যবহার করবেন। বাসার বাইরে মাস্ক ব্যবহার করাকালীন কোনোভাবেই মাস্ক খোলা যাবে না এবং খাওয়া-দাওয়া সবকিছু পরিহার করতে হবে। বাসার বাইরে কোনো খাওয়া-দাওয়া নেই এর মূলনীতি মাথায় রাখতে পারেন।

৭. যারা আক্রান্ত হননি তারা প্রতিনিয়ত ট্যাবলেট জিংক (Tab. Pep-20mg) প্রতিদিন ১টি করে এবং ভিটামিন ডি (Cap. D- cap 20000 ev Cap. Vital D 20000) সাপ্তাহিক ১টা করে খেতে পারেন।

এই মুহূর্তে কোভিড ইনফেকশন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সবার আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। আজকের এ অবস্থা মূলত বিগত তিন থেকে চার মাস আমাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের ফলাফল। কথাগুলো মাথায় রেখে চললে আশা করি নিজে সুস্থ থাকতে পারবেন এবং আরেকজনকে সুস্থ রাখতে পারবেন।

লেখক : কনসালট্যান্ট ও পেইন ফিজিশিয়ান

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close