প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভারতের লোকসভা নির্বাচন

আজ ২১ রাজ্যের ১০২ আসনে ভোট

প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি এনডিএ ইন্ডিয়া * পশ্চিমবঙ্গে মোদি বনাম ‘দিদি’র লড়াই

ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হচ্ছে আজ। লোকসভার ৫৪৩টি আসনে এবার নির্বাচন হচ্ছে সাত দফায়। আজ প্রথম দফায় ২১টি রাজ্যের ১০২ আসনে ভোট হবে। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশটিতে নির্বাচনে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দল ভোটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। তবে নির্বাচনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালিয়েন্স (এনডিএ) এবং বিরোধী কংগ্রেসের নেতৃত্বে ২৬টি দল নিয়ে গঠিত ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (আইএনডিআইএ বা ইন্ডিয়া)। খবর আলজাজিরা, দ্য হিন্দু ও আনন্দবাজার পত্রিকা।

এদিকে, ভোট উপলক্ষে দেশজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। সীমান্ত দিয়ে কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ভারতে। খবর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার।

দেশটিতে এবার ভোট হবে ৪৪ দিন ধরে। আজ প্রথম দফায় সবচেয়ে বেশি ভোটগ্রহণ হচ্ছে তামিলনাড়ুতে। দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে ৩৯টি লোকসভা আসনের সবগুলোতেই ভোটগ্রহণ হবে। মণিপুরের পাশাপাশি ছত্তিসগড়ের মাওবাদী উপদ্রুত অঞ্চলেও ভোটের দিন হিংসার আশঙ্কায় বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করেছে নির্বাচন কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে ২৬ এপ্রিল ৮৯ আসনে, তৃতীয় ধাপে ৭ মে ৯৪ আসনে, চতুর্থ ধাপে ১৩ মে ৯৬ আসনে, পঞ্চম ধাপে ২০ মে ৪৯ আসনে, ষষ্ঠ ধাপে ২৫ মে ৫৭ আসনে এবং শেষ ধাপে ১ জুন ৫৬ আসনে। ৫৫ লাখ ইলেকট্রনিং ভোটিং মেশিন ব্যবহার করে এবার ভোট দেবেন ৯৬ কোটি ৯০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার। ভোটগ্রহণ শুরু হবে স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে। চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। একযোগে ৪ জুন ফল ঘোষণা করা হবে।

৫৪৩টি আসনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি আসন। আজ পশ্চিমবঙ্গের প্রথম দফার নির্বাচন হচ্ছে লোকসভার তিনটি আসনে। আসন তিনটি হলো কোচবিহার, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার। গোটা দেশের ২৮টি রাজ্য ও ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে ১৭টি রাজ্য ও ৪টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১০২টি আসনে। একই সঙ্গে নির্বাচন হচ্ছে অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যের বিধানসভার ৬০টি এবং সিকিমের ৩২টি আসনে।

এবারের নির্বাচনে জিততেও বেশ কয়েকটি প্রদেশ ও অঞ্চল মুখ্য ভূমিকা রাখবে। এগুলো হলো তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্রের নাগপুর, মেনিপুর এবং উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগর। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তামিলনাড়ুর ৩৯টি আসনের একটিতেও জিততে পারেনি মোদির বিজেপি। তবে দেড় বছর ধরে মণিপুরে সংঘর্ষ চলার পরও ওই রাজ্যে যাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি সেখানে ভোটের প্রচারেও যাননি। ওই রাজ্যের একাধিক গোষ্ঠী ও সংগঠন ভোট বর্জনের ডাক দিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে ভোট হতে চলা তিন আসনেই ২০১৯ সালে জয় পেয়েছিল বিজেপি। এবারও কোচবিহার থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। তার বিপরীতে রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়া। জলপাইগুড়িতে আগেরবার জয়ী জয়ন্ত রায়কেই প্রার্থী করেছে বিজেপি। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা নির্মলচন্দ্র রায়। আলিপুরদুয়ার আসনে বিজেপির প্রার্থী মনোজ টিগগা। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী এবং রাজ্যসভায় তৃণমূলের এমপি প্রকাশ চিক বড়াইক।

পশ্চিমবঙ্গে মোদি বনাম মমতা বা দিদি : লোকসভা নির্বাচনে আলোচ্য বিষয় পশ্চিমবঙ্গ। বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি লোকসভা আসন। উত্তরপ্রদেশের ৮০টি ও মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের পরেই তৃতীয় বৃহত্তম সংসদীয় আসনের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। এই রাজ্যের বিধানসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২০১৩ সাল থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভারতীয় রাজনীতিতে উল্কাসম, আন্দোলনের মাঠ গরম করতে কীর্তিমান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে লড়াই করছে বিজেপি। বিধানসভার ভোটে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একচ্ছত্র দাপট থাকলেও লোকসভায় গত নির্বাচনে ৪২টির মধ্যে বিজেপি ১৮টি আসন পেয়ে সবাইকে চমকে দেয়।

পশ্চিমবঙ্গে এবারও বিজেপি দৃশ্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ৩৫টির বেশি আসন নেবে বলে নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করেছে। বিজেপির প্রধানতম শক্তি হচ্ছে, কেন্দ্রে তাদের সরকার রয়েছে। ফলে সরকারের সব এজেন্সিকে তারা নির্বাচনে ব্যবহার করার সুযোগ গ্রহণ করেছে।

সরকারের দুর্নীতিবিরোধী সব তদন্ত সংস্থা (ইডি, সিবিআই, আয়কর বিভাগ ইত্যাদি) পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মন্ত্রী, নেতাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যসরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতা দুর্নীতির অভিযোগে কারা অন্তরীণও রয়েছেন।

বিজেপি আর্থিকভাবেও শক্তিশালী। তারা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিপুল অর্থকে এই নির্বাচনে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সর্বভারতীয় দল হিসেবে বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষমতা যথেষ্ট সংহত, সেই সুযোগকে তারা পশ্চিমবঙ্গেও ব্যবহার করছে।

ভারতের অন্যত্র কংগ্রেস, বামপন্থি, তৃণমূলসহ আঞ্চলিক দলগুলোর সমবায়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়া জোট’ বিজেপির মোকাবিলা করলেও পশ্চিমবঙ্গে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এখানে সম্মিলিত বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া জোট’ ঐক্যবদ্ধ নির্বাচনে লড়তে ব্যর্থ হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্য করতে রাজি হননি। এখানে কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট যৌথভাবে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে।

বিজেপি দলীয় কর্মসূচিতে ধর্মকে ব্যবহার করছে। তারা রামরাজ্যের রাজনৈতিক তরজাকে কাজে লাগিয়ে নরেন্দ্র মোদিকেই নির্বাচনের মুখ করেছে। ‘প্রার্থী নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেই ভোট দিন’ এটাই বিজেপির মুখ্য প্রচারণা। মোদিই স্থিতিশীল হিন্দু ভারতের প্রতীক- সেটাই বিজেপি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। এর বিপরীতে তৃণমূল কংগ্রেসও বাংলার মেয়ে, মা-মাটির প্রতীক, লড়াকু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নির্বাচনে মুখ্য ফোকাস হিসেবে নিয়ে প্রচারণায় নেমেছে। বহিরাগতদের ঠেকাতে স্থানীয় দিদি মমতাই পশ্চিমবঙ্গের ভরসা, একমাত্র মমতাই পারে বিজেপিকে ঠেকাতে- এটাই তৃণমূল কংগ্রেসের মূল আপিল ভোটারদের কাছে। ফলে মোদির বিপরীতে লড়ছেন দিদিই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close