মিজান রহমান

  ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

হস্তক্ষেপ মোকাবিলাই ভোটে বড় চ্যালেঞ্জ

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে সংসদ সদস্যরা উপজেলাগুলোয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই তাদের বলয়ের মধ্যে উপজেলার চেয়ার রাখতে চাচ্ছেন। ফলে এই বলয়ের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রার্থীরা। বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগই। অথচ আসন্ন এ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী বা কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ চাচ্ছেন না প্রার্থীরা। প্রভাবমুক্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন তারা চাচ্ছেন। আর প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করাই এখন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।

জানা গেছে, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে নিজের ছেলেকে ভোট না দিলে উন্নয়নকাজ না করার হুমকি দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী। নাটোরে লুৎফুল হাবিবের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতি ও বিভেদের তথ্য দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এরপর দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ডেকে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন।

এ অবস্থায় দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ বিভাগের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের দলের এই নির্দেশ জানাতে শুরু করেছেন। কেউ ভোট থেকে সরে না দাঁড়ালে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র মতে, দলের প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক ও উপদপ্তর সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরকে সারা দেশে মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের স্বজন ও পরিবারের সদস্য নির্বাচন করছেন সেই তালিকা তৈরির নির্দেশ দেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তাদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, দলীয় প্রধানের নির্দেশনা পেয়ে ওবায়দুল কাদের গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে মাদারীপুর সদরের সংসদ সদস্য ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালীর একরামুল করিম চৌধুরীকে ফোন করে দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এই দুটো স্থানে সংসদ সদস্যের ছেলেরা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। সংসদ সদস্যরা সন্তানদের পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ করছেন।

জানা গেছে, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপ। এই নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা তৎপর। যদিও দলীয় প্রতীকে এই নির্বাচন হচ্ছে না। এবার দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। তবে বিভিন্ন স্থানে সংসদ সদস্যরা উপজেলার চেয়ারম্যান পদটিও অনেক স্থানে ভাগিয়ে নিতে পছন্দের প্রার্থী দিচ্ছেন। তাতে তৃণমূলে দলীয় কোন্দলও বাড়ছে। আসন্ন এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় ভোট হবে। এসব উপজেলার চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ৬৯৬ জন। তার মধ্যে আওয়ামী লীগের অন্তত ৪৬৬ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন হয়। আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ এবার উপজেলায় দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিচ্ছে না।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যে যার মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। কেন্দ্র থেকেও পছন্দের প্রার্থী সমর্থনের ইশারা দিচ্ছেন কেউ কেউ।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিভিন্ন জায়গায় নিকটাত্মীয়দের মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এরই মধ্যে অবশ্য বলেছেন, ‘প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন উন্মুক্ত মানে উন্মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন করার ইচ্ছা-বাসনা অনেকেরই থাকতে পারে। আমাদের বক্তব্য হলো, এমপি বা মন্ত্রীরা কোথাও কোনো প্রভাব বিস্তার করবেন না।’

একাধিক উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা নির্বাচনেও এমপিরা মাঠ দখলের চেষ্টা করছেন। সাংগঠনিক ও এমপির ভয় আছে বিভিন্ন স্থানে। মাঠে প্রার্থীদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে তারা কোনো নির্দেশনা মানেছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close