বদরুল আলম মজুমদার

  ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪

এক দফার আন্দোলন

তৃণমূল থেকে শুরু করবে বিএনপি

আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠনের পরও এক দফার আন্দোলন জোরদার করবে বিএনপি। এজন্য দলটি এবার তৃণমূল থেকে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই মিত্র দলগুলো নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে দলটি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নির্বাচনের আগে রাজপথে শক্তি প্রদর্শন ও হার্ডলাইন নীতি অনুসরণ করেও সাফল্য পায়নি বিএনপি। তাতেও হাল ছাড়তে রাজি নয় দলটির শীর্ষ নেতারা। হতাশা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এবারও তৃণমূলে ফিরছে দলটি। এক দফা দাবি আদায় নিজেদের আরো শক্তিশালী ও সুসংহত করতে মনোযোগী বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। ‘ঐক্যে আস্থা’ রেখেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে গতি ফেরাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে এসব বিষয় উঠে এসেছে। বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এ তথ্য।

জানা গেছে, লক্ষ্য অর্জনে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে জনস্রোত তৈরির পাশাপাশি তৃণমূলে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে একমত কেন্দ্রীয় নেতারা। তাদের মতে, টানা তিন মাস ‘আত্মগোপনে’ থাকার পর গত শনিবার রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিলে নেতাকর্মী নামে।

জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য একজন সদস্য বলেন, আমাদের রাজপথের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। এটা চালিয়ে যাব। কোন সময়ে, কোন ধরনের কর্মকাণ্ড চলবে তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষের একটাই চাওয়া সরকারের পদত্যাগ। সেই দাবিতে আমাদের নেতাকর্মীদের করণীয় কিংবা নির্ধারণে বার্তা দেওয়া আছে। নেতাকর্মীরা আত্মবিশ্বাসী। যার প্রমাণ শুক্র ও শনিবারের কালো পতাকা মিছিলে মিলেছে। সরকারের নানা দমন-নির্যাতনের মধ্যেও সন্তোষজনকভাবে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি সফল করেছেন। অনেক নেতাকর্মীর হতাশার কথা বললেও বাস্তবে ভিন্ন। বিএনপি নেতাদের মধ্যে কোনো হতাশা নেই। আমাদের একটাই কথা, দেশে গণতন্ত্র রক্ষা, সুশাসন ফিরিয়ে আনা, বর্তমান সরকারের পতন নিশ্চিত করা। এজন্য যা যা করণীয় বিএনপি তা করবে।

সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা জানান, ৭ জানুয়ারির পর বিভিন্ন সময়ে নীতিনির্ধারকদের বৈঠক হয়েছে। এক দফার আন্দোলন চলমান থাকলেও এসব বৈঠকে আন্দোলনকে মূল্যায়ন করা হয়। প্রায় বৈঠকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মী ও দলের নানা সংকটের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এসব সংকট কাটিয়ে আন্দোলন চাঙা ও নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে তৃণমূল থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা, থানা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দল ও সংগঠনের দুর্বলতা শনাক্ত করে শিগগিরই সরকারবিরোধী আন্দোলনকে ক্রমান্বয়ে গতিশীল করা হবে।

এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দলীয় পদপদবিতে থেকেও যারা আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় কিংবা গুরুতর অসুস্থ, তাদের জায়গায় ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে বিএনপি। একই সঙ্গে নিষ্ক্রিয় নেতাদের সক্রিয় করতে কাউন্সিলিং করবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তৃণমূল থেকেই সাংগঠনিক তৎপরতা ও আন্দোলনকে একসঙ্গে অব্যাহত রাখা হবে। প্রথম দিকে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি দিয়ে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সক্রিয় ও রাজপথে নামানো হবে। তবে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপি অনেকটাই ছত্রভঙ্গ। তৃণমূল পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসায় অনেকেই হতাশায়। এখন নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা, বিশ্বাস আর পরিবর্তনের স্বপ্ন তৈরিতে কাজ করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। এ কাজের অংশ হিসাবে এরই মধ্যে সারা দেশে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে তাদের সুবিধা-অসুবিধা, মামলা-হামলার খোঁজ নিতে শুরু করেছেন শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ছাত্রদল, যুবদল আর স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রত্যেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও চাঙা করতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।

বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, আমরা মাঠের কর্মসূচিতে আছি। আমাদের ও জনগণের দাবি দাওয়া নিয়ে কথা বলছি। এটাকে আরো এগিয়ে নিতে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। এছাড়া সাংগঠনিক শক্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। সে কারণেই শনিবারের কালো পতাকা মিছিলে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক উপস্থিতি বেড়েছে। নেতাকর্মীদের চাঙা রাখতে একটার পর একটা কর্মসূচি আসছে। আরো আসবে। ক্রমেই আবারও এক দফার আন্দোলন চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close