রাবি প্রতিনিধি

  ১৪ মার্চ, ২০২৩

থমথমে রাবি ক্যাম্পাস

শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা সরে যাওয়ায় এখন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে। এদিকে শিক্ষার্থীরা সরে যাওয়ায় ক্যাম্পাসের ভেতর ও রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে হালকা যান চলাচল করতেও দেখা গেছে।

সোমবার (১৩ মার্চ) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের

অভ্যন্তরে থমথমে পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। কোথাও নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। নেই বিক্ষোভ মিছিল বা আন্দোলন। সকালে লাইব্রেরির সামনে কয়েকজন শিক্ষার্থী বসলেও পরে তারা আবার উঠে যান। তবে মহাসড়ক দিয়ে অটোরিকশাসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করছে। বাস-ট্রাকের মতো বড় যানবাহন বিকল্প পথে রাজশাহী বাইপাস সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। যান চলাচলে যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বিনোদপুর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুরো ক্যাম্পাস নজরে রাখছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এর আগে রবিবার (১২ মার্চ) রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের রেললাইনে আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল শিক্ষার্থীরা। ফলে রাজশাহী রেলস্টেশনের সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া বাকি সব জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল প্রায় ৪ ঘণ্টা। পরে রাত ২টায় আবার রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে, এদিন রাত ৮টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের

(রাবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষের ঘটনায় ৭ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ জন শিক্ষার্থী। তার মধ্যে চারজন নারী শিক্ষার্থীও ছিলেন। পরে প্রশাসন এসে তাদের সঙ্গে কথা বলে অনশন স্থগিত করেন।

এর আগে দুপুর ১২টায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অগ্নিসংযোগ, ইট ও গাছের গুঁড়ি রেখে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক সড়ক অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে তারা সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে সরে গিয়ে চারুকলা অনুষদসংলগ্ন রেললাইনে অবস্থান নেয়। এ সময় তারা ব্যানার, টায়ার, পাখির অবয়ব (ডামি) পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ। তবে বিকল্প পথে চলাচল করে যানবাহন। নাটোরের দিক থেকে আসা যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে বুধপাড়া ফ্লাইওভার হয়ে ঢুকছে। আর বাজারের দিক থেকে কাটাখালীর দিকে আসা ছোট যানবাহন ফুলতলা বালুরঘাট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বাসগুলো সিরইল বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে ভদ্রা মোড় দিয়ে নতুন বাইপাস হয় নাটোরের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাইকিং করবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও দেখাতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইডি কার্ড।

সোমবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের উপাচার্য কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনকালে এসব কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

এ সময় তিনি বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের বেশি দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে। ক্যাম্পাসে মাইকিং করে বহিরাগত প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। সন্ধ্যার পর থেকে কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদের চলাচলের ক্ষেত্রেও তাদের নিজস্ব আইডি কার্ড দেখাতে হবে। শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড সঙ্গে নিয়ে চলাচল করার পরামর্শ দেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত গেট থাকায় এমন সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা গেটের সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছি।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রথমে আমার শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলেও পরে আর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পরে বহিরাগতরা এসে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ফলে আন্দোলন বড় আকার ধারণ করে। এসব বিষয় খুঁটিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিলাম; এখন কমিটি আরো দুজন সদস্য বাড়িয়েছি। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি সব বিষয়ে খুঁটিয়ে দেখবেন এবং আমাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। আমরা এরই মধ্যে অজ্ঞাতনামা ৫০০ জনের নামে মামলা করেছি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা যারা ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য মেস মালিক সভাপতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে আলোচনা করব। তারা যেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে।

সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ওপর যে হামলা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা রয়েছে। তারা যেকোনো জায়গায় ভিডিও ধারণ করতে পারে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close