গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৯ ডিসেম্বর, ২০২২

জনমনে শঙ্কা, কী হচ্ছে ঢাকায়

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশল প্রশাসনের

পূর্ব-নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ। তবে সমাবেশ ও সমাবেশস্থল ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এখন মুখোমুখি। বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি। এ ইস্যুতে বেশ কিছুদিন ধরে উত্তপ্ত পুরো রাজনৈতিক অঙ্গন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সারা দেশের মানুষ, কি হচ্ছে ঢাকায়!

কেন্দ্রের ডাকে সমাবেশটি সফল করতে কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছদ্মবেশে দলীয় নেতাকর্মীরা ঢাকায় জমায়েত হতে থাকেন। রাজধানীর বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও আবাসিক বাসাবাড়িতে অবস্থান নেয় অনেকেই। এরই মধ্যে রাজধানীতে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ অভিযানেও দমছিল না দলীয় নেতাকর্মীরা। নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় এলাকায় সমাবেশ করতে নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারও নানা কৌশল চালিয়ে যাচ্ছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে স্থান নির্ধারণ করে ঘোষণা দেওয়া হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে সমাবেশ করতে দেবে না বিএনপিকে। চাইলে মিরপুর কালশী মাঠ অথবা টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমার মাঠও বিকল্প হিসেবে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এতেও সম্মতি নেই দলটির। এ থেকেই সরকার, পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত সংঘাতে রূপ নিয়েছে।

শুরু থেকেই দলটির প্রত্যাশা নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি করার। পুলিশ সমাবেশের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়ায় নতুন করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। সমাবেশ সফল করতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে লিফলেট বিতরণ, নেতাকর্মীদের চাঙা করা এবং সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের বার্তা পৌঁছাতে তৎপর ছিল দলটির কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা। এর আগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে চলতে থাকে বাগবিতন্ডা।

এরই মধ্যে বুধবার হঠাৎ পুলিশি অ্যাকশনে পুরো চিত্র বদলে যায়। বিএনপির নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও দলটির কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে নিহত হয়েছেন একজন কর্মী, আহত অনেকেই। এ ঘটনার পর থেকে রাজধানীজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এরই মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছেন নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনেই অনুষ্ঠিত হবে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ। দলটির অনড় অবস্থানের কারণে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিদেশি কূটনীতিক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা আরো বেড়েছে। উদ্বেগ জানিয়েছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দেশটির পক্ষ থেকে পল্টনের ঘটনায় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।

এদিকে, বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে শুধু রাজধানী না; দেশজুড়েই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর সমাবেশ ঠেকাতে সারা দেশেই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা ও গণগ্রেপ্তার চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের শীর্ষ নেতাদের ধরতে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। বিএনপির অনেক ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে অবস্থান করছেন।

বুধবারের পর রাজধানীর পরিস্থিতি নিয়ে শহর থেকে গ্রাম সবস্তরের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে সাধারণ মানুষ পত্রিকা অফিসে ফোন করে ঢাকার পরিস্থিতি জানতে চাচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই বিএনপির সমাবেশ ঘিরে নানা মন্তব্য ও আলোচনা-সমালোচনা চাওর আছে।

অন্যদিকে, সমাবেশে গণজমায়েত ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসানো হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। ঢাকার প্রবেশদ্বার আমিনবাজার, টঙ্গী-উত্তরা, মাওয়া রোড, যাত্রাবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জে তল্লাশি চলছে। সব স্থানেই পুলিশ সতর্ক পাহারায়। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তারক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ঝেড়ে মুছে প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ১০ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত রয়েছে কর্তৃপক্ষের। বিএনপি ঘোষিত ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে রাজধানীর পরিবেশ যাতে স্বাভাবিক থাকে সেজন্য যান-চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

বলা হয়েছে, রাজধানীতে গাড়ি চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। ঢাকা শহর, শহরতলী ও আন্তঃজেলা রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। ঢাকা পরিবহন মালিকদের পক্ষ থেকে এ ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর নয়াপল্টনে রাস্তা খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কমেনি। এ সমাবেশটি সফল করা বিএনপির জন্য রাজনীতিতে টিকে থাকার লড়াই।

পুলিশ ও সরকারের দ্বিমুখী বাধার পরও বিএনপি নয়াপল্টনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার পারদ চড়াচ্ছে।

বিএনপি নয়াপল্টনেই ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ করবে- এমন অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে চাই। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে এ জন্য সরকারই দায়ী থাকবে। তিনি নয়াপল্টন অফিস থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে সমাবেশ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অপরদিকে, পল্টন এলাকায় আপাতত রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপস) বিপ্লব কুমার সরকার। এখন এ এলাকায় জনসাধারণের চলাচলও বন্ধ থাকবে বলে জানান তিনি।

বিপ্লব কুমার বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকা (পল্টন) পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকায় যান চলাচল, জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকানো হচ্ছে না। তবে এখানে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই।

তিনি বলেন, বিএনপির দলীয় কার্যালয়কে আমরা এখন আইনের ভাষায় ‘প্লেস অব অকারেন্স (পিও)’ বলছি।

আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির সমাবেশ ঘিরে গণ-জমায়েত ঘটনার বিষয়ে বলেছেন, ডিসেম্বর মাস বিজয়ের মাস। বিজয়ের মাসে নাশকতার বিরুদ্ধে খেলা হবে। তিনি বলেন, বিএনপির দুরভিসন্ধি আমরা বুঝে গেছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তথা দেশবাসী প্রস্তুত, নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে এবার রুখে দাঁড়াবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close