প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২২

বায়ুদূষণ খেয়ে নিচ্ছে কষ্টার্জিত জিডিপি

দেশে বায়ুদূষণের প্রভাবে ২০১৯ সালে অন্তত ৭৮ হাজার ১৪৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং কষ্টে অর্জিত জিডিপির ৩ দশমিক ৯ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদন জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। রবিবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকার একটি হোটেলে ‘ব্রিদিং হেভি : নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বায়ূদুষণ যেমন খেয়ে ফেলছে অতি কষ্টে অর্জিত জিডিপির প্রবৃদ্ধি তেমনি কমছে মানুষের আয়ুষ্কাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে দূষিত বিভাগ ঢাকা। বড় বড় নির্মাণ প্রকল্প ও ব্যাপক যানবাহনের কারণে এই দূষণ হচ্ছে। সেইসঙ্গে ঢাকার আশপাশের ইটভাটার ধোয়া দূষণ আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসনালির সংক্রমণ ও হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি মানুষের বিষণ্নতাও বাড়ছে।

মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের প্রভাব অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন।

সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও বিশ্বব্যাংকের হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেগ আজফার রাজাও উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় অনেক বেশি নির্মাণকাজ ও যানবাহন চলাচল করে যেসব এলাকায়, সেখানে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে ১৫০ শতাংশ বেশি। আর ঢাকার আশপাশে ইটভাটা সংলগ্ন এলাকায় তা গড়ে ১৩৬ শতাংশ বেশি।

এমনকি দেশে সবচেয়ে কম দূষণের এলাকা সিলেটেও পিএম ২.৫ এর মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিরাপদ সীমার চেয়েও ৮০ শতাংশ বেশি। দেশের পূর্বাঞ্চল, অর্থাৎ চট্টগ্রাম-সিলেটের চেয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা ও রাজশাহীতে বায়ুদূষণ বেশি।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, বায়ুদূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু, বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস, হার্ট বা শ্বাসযন্ত্রের রোগীদের ওপর। দূষণের প্রভাব পড়ছে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও।

বাতাসে অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ (পিএম ২.৫) এক শতাংশ বাড়লে তা মানুষের বিষণ্নতার সম্ভাব্য ঝুঁকি ২০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।

প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের প্রভাব কমানোর জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া, জনস্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন, বায়ুদূষণ ডেটা পর্যবেক্ষণ, পূর্ব সতর্কতা এবং আরো গবেষণার সুপারিশ করা হয়েছে।

ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান ড্যান চেন বলেন, বায়ুদূষণ শিশু থেকে বয়স্ক সব মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি করছে। বাংলাদেশে মৃত্যু ও ‘ডিসঅ্যাবিলিটির’ দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ এটি। এতে মানুষের অকাল মৃত্যু বাড়ছে।

ভালো বায়ুতে শ্বাস নিতে পারাকে ‘সাংবিধানিক অধিকার’ হিসেবে বর্ণনা করে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘নিম্নমানের বায়ু আমাদের নীরবে মেরে ফেলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০৪০ এর মধ্যে দেশ তামাকমুক্ত হবে। সাত বছর চলে গেলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক বন্ধের রোডম্যাপ তৈরি করতে পারেনি। আমাদের কাছে তামাকের রাজস্ব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জনস্বাস্থ্যের চেয়ে। তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার ৭ শতাংশ অথচ সেখানকার বোর্ড অব ডিরেক্টরে সরকারি আমলা আছেন ছয়জন। ইটের ভাটার দূষণের জন্য ঢাকা ও গাজীপুরসহ পাঁচ জেলাকে চিহ্নিত করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘করতে হবে তা আমরাও জানি কিন্তু কীভাবে করব সেটি হচ্ছে চ্যালেঞ্জ। আমাদের দল-মত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে।’

সরকারি কর্মকর্তারা দূষণ সৃষ্টিকারী অনেক উৎসের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়েন দাবি করে স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা সব সময় সঠিকভাবে কাজ করেন তা আমি বলছি না। তবে অনেক জায়গায় কাজ করতে তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়।’

‘ইটভাটার মালিক থেকে শুরু করে অনেক বায়ুদূষণকারীরা সমাজের নানা দিক থেকে এত প্রভাবশালী যে তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা যায় না। তাই বলে দায় এড়াচ্ছি না। সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারকে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগকেও তার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেন দূষণ না বাড়ায় তার জন্য পরিকল্পনা নিতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close