জাহিদুল ইসলাম

  ২০ নভেম্বর, ২০২২

উদ্বোধনী ম্যাচ আজ

কাতার-ইকুয়েডর মুখোমুখি

দেখতে দেখতে অপেক্ষার শেষ দিনটি ফুরিয়ে গেল। অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসানের পর আজ থেকে শুরু বিশ্ব ফুটবলের মহাযজ্ঞ-২২তম বিশ্বকাপ ফুটবল। এবারের বিশ্বকাপে আয়োজক দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ছোট মুসমিল দেশ কাতার। পাঁচ মহাদেশের বাছাই পর্ব পার হয়ে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব পার হয়ে কাতার বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পেয়েছে ৩১টি দেশ (স¦াগতিক কাতার ছাড়া)

এই ভাগ্যবান দলগুলো আট গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়াই করবে বিশ্বসেরার শিরোপার জন্য। পরে প্রথম রাউন্ডে পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ১৬ দলকে নিয়ে শুরু হবে রবিন রাউন্ড। দ্বিতীয় রাউন্ডে পা ফসকালেই যে কারো কপালে জুটতে পারে ঘরে ফেরার টিকিট। এমনটা হোক তা কোনো দলই চাইবে না । তাই প্রথম থেকেই কৌশল ও সাবধানতাকে পুঁজি করে পা ফেলবে প্রতিটি দল। অন্তত চাইবে ১৮ ডিসেম্বর লুসিয়া স্টেড়িয়ামটা আলোকিত করতে।

চার বছর পর পর বিশ্বকাপ শুরু হলে বাঙালিরা বিভক্ত হয়ে পড়ে দুই ভাগে। ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে নিয়ে শুরু হয় কথার লড়াই। সে লড়াইয়ে কখনো এসে হাজির হয় জার্মানি, ইতালি কিংবা নতুন পরাশক্তি ফ্রান্স সমর্থকরা। বাদ পড়ে না স্পেন-ইংল্যান্ডে কিংবা উরুগুয়েও। ফুটবল এমনই এক যজ্ঞ, যেখানে ছোকরা থেকে বুড়োরাও প্রিয় দলের জয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন। বিদায়ে হন অশ্রুসিক্ত। এরই মধ্যে কাতার ফুটপাত থেকে শুরু করে আকাশচুম্বী ভবনগুলো ভরে উঠেছে ৩২ দেশের রঙিন পতাকায়। আগে উদ্বেধনী ম্যাচ খেলার নিয়ন ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের। ২০২২ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপের পর থেকে ফিফা নিয়মটি সংস্কার করে।

তবে আজ কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে গ্রুপ-এর দুই দল ইকুয়েডর ও স্বাগতিক কাতার। বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এর মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে মাসব্যাপী বিশ্বকাপের জমাট লড়াই।

এই প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ হিসেবে কাতারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে কাতারের এটি প্রথম অংশগ্রহণ। স্বাগতিক হিসেবে কাতার সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

অন্যদিকে আট বছর অনুপস্থিত থাকার পর বিশ্বকাপে ফিরেছে ইকুয়েডর। কাগজে কলমে কাতারের থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর। যে কারণে ম্যাচটিতে জয়ের সম্ভাবনায়ও এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা। দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে কঠিন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ইকুয়েডর চতুর্থ স্থান লাভ করেছিল। ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে বাজিকরদের কাছে এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর।

কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে কাতারও প্রস্তুত। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এ পর্যন্ত কোনো স্বাগতিক দল পরাজিত হয়নি। ইতিহাস এদিক থেকে কিছুটা হলেও কাতারের পক্ষে রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে উদ্বোধনী কোনো ম্যাচ গোলশূন্যভাবে শেষ হয়নি। কাতার এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে চিলির সঙ্গে ২-২ গোল করার পর একে একে কাতার হারিয়েছে গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানাম ও আলবেনিয়াকে। এসবই কাতারকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।

গত পাঁচ বছর ধরে স্প্যানিশ কোচ ফেলিক্স সানচেজ বাসের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক কিছুতেই তাদের মানিয়ে নেওয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গ্রুপ-এর অপর দুটি দল হচ্ছে সেনেগাল ও নেদারল্যান্ডস। কাতারের লক্ষ্য স্বাগতিক হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে যতটা সম্ভব সবাইকে আকৃষ্ট করা, ভালো খেলা উপহার দেওয়া।

আফ্রিকান নেশন্সকাপ বিজয়ী সেনেগাল ও ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডসকে মোকাবিলা করা বিশ্বের ৫০তম র‌্যাংকধারী দলটির পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। কিন্তু অক্টোবরের চারটি প্রীতি ম্যাচের জয় কাতারকে দারুণ আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। শেষ ম্যাচে আলবেনিয়ার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন তারকা স্ট্রাইকার আলমোয়েজ আলি। দেশের হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪২ গোল করেছেন আলি।

২০০২ সালে ওই সময়কার চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে সেনেগাল উদ্বোধনী ম্যাচে অভিষিক্ত দল হিসেবে যে রেকর্ড গড়েছিল তার পুনরাবৃত্তি করতে চায় কাতার। একই সঙ্গে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় স্বাগতিক হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়ে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ডটা স্পর্শ করতে চায় না মেরুনরা। আজকের ম্যাচে জয়ী হতে পারলে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে জয়ের ইতিহাস গড়বে কাতার।

বল মাঠে গড়নোর আগে বিশ্বজুড়ে অভিবাসী শ্রমিকদের নায্য পাওনাসহ অন্যান্য আরো কিছু ইস্যুতে কাতারকে নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। তবে পাশাপাশি অবৈধ খেলোয়াড় বাছাইর্বে খেলানোর অভিযোগে ইকুয়েডরও সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ওই অভিযোগের কোনো সত্যতা মিলেনি। এর আগে ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালে তিনবার বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ইকুয়েডর প্রথম থেকেই এগিয়ে যেতে চায়। ১৬ বছর আগে তারা শেষ ১৬ তে গিয়েছিল, বাকি দুটি আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে।

বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচে খেলা পাঁচটি ম্যাচের কোনোটিতেই কোনো গোল হজম করেনি ইকুয়েডর। পরশু রাতে সর্বশেষ ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে। দুই বছর আগে দলের দায়িত্ব পাওয়া আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাভো আলফারোর অধীনে এভাবেই পুরো ইকুয়েডর বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।

কাতার এর আগে তিনবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলেছে যার মধ্যে একটিতে জয়, একটি ড্র ও একটি পরাজিত হয়েছে। আলবেনিয়ার বিপক্ষে শেষ প্রীতি ম্যাচে অ্যাটাকার আহমেদ আয়েলদিন ইনজুরিতে পড়ে ২৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন। এই একটি ইনজুরি ছাড়া আপাতত কোনো ঝুঁকি নেই কাতার শিবিরে। যদিও কাতারের মেডিকেল টিম আশ্বস্ত করেছেন আয়েলদিনের ইনজুরি ততটা গুরুতর নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close