মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

  ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ

পুলিশ সাংবাদিকসহ আহত শতাধিক * ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে মুক্তারপুর এলাকা রণক্ষেত্র * পুলিশকে লক্ষ্য করে চারদিক থেকে ইটপাটকেল * পুলিশের লাঠিপেটা ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুরে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় মুক্তারপুর এলাকা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পুলিশ ও সাংবাদিকদের ৯টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও তাতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

পুলিশ বলছে, তাদের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হন। সাংবাদিক আহত হয়েছেন দুজন। এ ছাড়া বিএনপি বলছে, তাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মিনহাজ-উল-ইসলাম, সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান, ইন্সপেক্টর অপারেশন মোজাম্মেল হক, এসআই কাজল দাস, এসআই মাঈনউদ্দিন, এসআই সুকান্ত বাউল, এসআই আমিনুল হাসান, এসআই অজিত, এসআই ইলিয়াস, কনস্টেবল রায়হান। এ ছাড়া রয়েছেন সাংবাদিক কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু, গোলজার হোসেন। এদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএনপির আহত শতাধিক নেতাকর্মী বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপি নেতাকর্মীরা বুধবার দুপুরের দিকে শহরের উপকণ্ঠে মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করেন। বেলা আড়াইটা থেকেই মুক্তারপুর এলাকার আশপাশে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এদিকে পুলিশও আগে থেকেই মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, শহর বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক পৌর মেয়র একেএম ইরাদত মানুর নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসে। এরপর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনের নেতৃত্বে অপর আরেকটি মিছিল সেখানে আসে। নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে সেখানে একটি ট্রাককে মঞ্চ বানিয়ে সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

এ সময় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে শুরু করলে পুলিশ বাধা দিতে এগিয়ে যায়। পুলিশ একটি মিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নিলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে চারদিক থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। প্রাণ বাঁচাতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। বিএনপি নেতাকর্মীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে সেখানে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে পুলিশ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ।

এদিকে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সদর উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ শহর ও মিরকাদিম পৌর বিএনপির নেতাকর্মীরা মুক্তারপুর ফেরিঘাট এলাকায় জড়ো হচ্ছিলেন। এ সময় দুদিক থেকে পৃথক দুটি মিছিল আসছিল। হঠাৎ পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। মিছিলের ব্যানার কেড়ে নেয় ও লাঠিচার্জ করে। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। তবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে- এমন কথা আমার জানা নেই। পুলিশের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির এ নেতা। তবে তিনি আহত নেতাকর্মীদের নামের তালিকা দিতে পারেননি।

সদর থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, বিএনপি সমাবেশ করার জন্য অনুমতি নেয়নি। তার পরও মুক্তারপুর এলাকায় বিএনপি মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিল নিয়ে শত শত নেতাকর্মী মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় আসতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে লাঠিসোটা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close