জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৯ আগস্ট, ২০২২

তৃণমূলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবে আ.লীগ হাইকমান্ড

আগামী জাতীয় নির্বাচন ও দলের জাতীয় কাউন্সিল- এই দুই লক্ষ্যে তৃণমূলের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আগামী সেপ্টেম্বরে শুরু হতে পারে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সিরিজ বৈঠক। দলের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত অর্থাৎ রাজধানী ঢাকায় থাকা নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে হবে সভাগুলো। এসব সভায় জেলা ও উপজেলাপর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদককে আমন্ত্রণ জানানো হবে। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক নেতারা তুলে ধরবেন জেলার নেতাদের বিগত দিনের ফিরিস্তি।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলকে সংগঠিত করার কাজ চলছে। বিষয়টি মাথায় রেখে সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের কর্মকৌশল নিয়ে তৃণমূলপর্যায়ের নেতাদের বিষয়ে সভানেত্রীর নানান পরিকল্পনা রয়েছে। তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল যাতে জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব না পড়ে, সে বিষয়ে জেলা-উপজেলাপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে বিশেষ নির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর ইউনিটসহ তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দেশব্যাপী নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকৃত পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করবেন। সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং তার সমাধান বা দিকনির্দেশনা দেবেন।

এসব বৈঠকে আলোচনায় বাদ যাবেন না বিতর্কিত নেতারাও। জেলা-উপজেলার শীর্ষ নেতা এবং স্থানীয় যেসব এমপি নিজেদের বলয় সৃষ্টি করতে চেয়েছেন এবং বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বেড়েছে তাদের পরিস্থিতি তুলে ধরবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, পর্যায়ক্রমে জেলাপর্যায়ের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বেশ কটি সভা করা হবে এবং প্রয়োজনে তৃণমূল নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। দলীয় সভাপতির নির্দেশনা অনুযায়ী এসব সভা হবে। গণভবনে আয়োজন করা হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এসব পরামর্শ সভা ডাকা হচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে পারে এসব সভা।

দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্য জোরদার করতে এসব সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ। এরপর দলের নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে এবং আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের তৃণমূল নেতাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেবেন। এটি ধারাবাহিক বৈঠক হতে চলেছে।

বাহাউদ্দিন নাছিম আরো বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটের দেশ ও দেশবাসীর বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি। তারা আগের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার চেষ্টা করবে। তারা অপকর্ম করে সব সময় আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন।

এসব বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। তিনি বলেন, এমন বৈঠক অতীতেও হয়েছে। এবারও হবে। তবে যেহেতু করোনা মহামারি একটা বিষয় রয়েছে, তাই নেত্রী কী গণভবন থেকে যুক্ত হবেন নাকি সরাসরি কথা বলবেন তা বলা যাচ্ছে না। আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি। যখন বলা হবে তখন জানা যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সবার সঙ্গে কথা বলবেন। জেলা-উপজেলাপর্যায়ের সবার সঙ্গে কথা বলবেন। তৃণমূলের কথা তিনি জানবেন, তারপর তিনি দিক নির্দেশনা দেবেন।’

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দলটির মহানগর, জেলা থেকে শুরু করে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত সব জায়গায় গড়ে উঠেছে ক্ষমতার বলয়বৃত্ত। তৃণমূলে কোথাও দ্বিমুখী, কোথাও ত্রিমুখী ক্ষমতাকেন্দ্রিক বলয় গড়ে উঠেছে। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রাখতে নিজেদের নিয়েই ‘খেলা’য় মেতে আছেন স্থানীয় নেতারা। নিজেদের মধ্যে তৈরি করেছেন এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রক গ্রুপ। নিজেদের মধ্যকার এমন অন্তর্দ্বন্দ্বে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত নেতারা। একই দল করলেও পরস্পরে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন।

সর্বশেষ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলপর্যায়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রতিপক্ষ হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই। বিশেষ করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে হেরেছে নৌকার মনোনীত প্রার্থীরাই। এজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং শীর্ষ নেতাদের দায়ী করছেন তৃণমূলের নেতারা। তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা বলছেন, দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তৃণমূলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে তারা সব ধরনের বলয় বা প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপ এড়িয়ে চলতে বদ্ধপরিকর। কারণ প্রভাবশালী এমন বলয়ে যুক্ত অনেকেই শুধু সুবিধাভোগী, অনেকে সুযোগসন্ধানী, কেউ কেউ অনুপ্রবেশকারী। তাদের এড়িয়ে তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে কাজ করছেন তারা।

তাই তৃণমূলের সমস্যা সরাসরি দলীয় সভাপতির শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে বর্ধিত সভার মাধ্যমে। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের নেতাদের কাছে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার কৌশল ব্যাখ্যা করতে পারেন। সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে সংখ্যালঘুদের বাঁচাতে এবং বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেবেন তিনি। এটি দলকে ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সংযুক্ত করবে এবং দলের ভিত্তি মজবুত করতে কাজ করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close