ঢাবি প্রতিনিধি

  ২৫ মে, ২০২২

ঢাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ৩০ জন আহত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হকিস্টিক, রড, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ ছাত্রদলের। হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ আহত নেতাকর্মীদের ঢাকা মেডিকেল ও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় ছাত্রদল। ছাত্রদল বলছে, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে তাদের পূর্বঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগ বলছে, এ হামলা ‘প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করায় তাদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের দুই দফায় এ সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মীসহ তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। গত রবিবার সন্ধ্যায় টিএসসিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের পর ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনার প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল ছাত্রদলের। কর্মসূচি অনুযায়ী ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় সকাল সাড়ে ৯টায় দোয়েল চত্বর এলাকায় প্রথম হামলার শিকার হন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় হামলার শিকার হয়ে ৩০ নেতাকর্মী আহত হন।

এর আগে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। মিছিল ও নানা স্লোগানে উত্তেজিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস এলাকা।

পরে বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলার প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে দোয়েল চত্বর এলাকায় ফের ছাত্রলীগের হামলার শিকার তারা। এ সময় অভিযোগ ওঠে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের গেটের পাশে মারধর করে ড্রেনে ফেলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের শহীদুল্লাহ হলের কর্মীরা এতে অংশ নেন বলে ছাত্রদল অভিযোগ করেন।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, আমি, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মাহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্য সচিব আমানউল্লাহ আমানসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যাচ্ছিলাম। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের মহড়া দেওয়ায় আমরা মিছিলে কোনো স্লোগান পর্যন্ত দিইনি। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম, তবুও আমাদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সরাসরি নির্দেশে ছাত্রদলের ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগ করে রাকিবুল ইসলাম বলেন, বিনা উসকানিতে ছাত্রদল হকিস্টিক, রড, চাপাতি, লাঠিসোটাসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। হামলায় কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াসহ অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ তাদের রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা আবারও ক্যাম্পাসে যাব। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকব। যত সন্ত্রাসী কার্যক্রমই হোক, আমরা আমাদের কাজ করে যাব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা থাকতে চাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগ হামলা করেনি। বরং দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে ছাত্রদল। ছাত্রদল অছাত্রদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিহত করে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি ছাত্রলীগ সমর্থন জানিয়েছে।

তিনি বলেন, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি তাদের মিছিল মিটিংয়ে যারা থাকে তারা কেউই সাধারণ শিক্ষার্থী নয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রানিং শিক্ষার্থীই না। সমসাময়িক কোনো ঘটনা যখনই ঘটে তখনই তারা তা ছাত্রলীগের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করে।

এদিকে এ হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের দুই নেতাকর্মীসহ তিনজনকে আটকে বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন ছাত্রদল কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, অন্যজন সম্ভবত সাধারণ নাগরিক। তাদের শাহবাগ থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ থেকেই কোনো অভিযোগ পাইনি। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা করার বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close