নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ মে, ২০২২

নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন

দায়ী আন্তর্জাতিক বাজার : বাণিজ্যমন্ত্রী

নিত্যপণ্যের দামের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ। শুধু নিম্নবিত্তরাই নয়, কুলিয়ে উঠতে পারছেন না মধ্যবিত্তরাও। বাজারের তালিকায় কাটছাঁট করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকেই। তেলের পর মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে চাল, ডাল, আটাসহ অনেক পণ্য। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সীমিত আয়ের মানুষ।

গতকাল বুধবার কারওয়ান বাজারের ৫টি দোকান ঘুরে দেখা যায়, সব ধরনের গুঁড়ো দুধের দাম কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকা বেড়েছে। নাম্বার ওয়ান দুধ বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ৫১০ টাকা, ডানো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪০ টাকায়, যা আগে ছিল ৭০০ টাকা।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজিতে ১০-২০ টাকা দাম বেড়েছে। গোল আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, পটোল ৪০, বেগুন ৫০-৬০, বরবটি ৪০, ঢ্যাঁড়শ ৪০, শসা ৪০ ও পেঁপে ৬০ টাকায়। কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। পেঁয়াজ ঈদের আগে প্রতি ৫ কেজি ছিল ১৩০ টাকা। গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৯০ টাকায়। ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

তবে, মাছ ও মাংসের বাজারে কিছুটা স্বস্তি আছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা। খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৫০-১৫৫ টাকা ও লেয়ার ৩০০-৩১০ টাকা। বড় আকৃতির রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ ও মাঝারি আকৃতির ৩০০-৩৫০ টাকা। ছোট আকারের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা ও বড় আকারের ১৭০-১৮০ টাকায়। মাঝারি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ৪০০ টাকা ও এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

প্রতি কেজি গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা ও হিমসাগর আম বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩০০ টাকায়। আটা-ময়দা, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের মূল্য সামনে আরো বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

কিছুটা কম দামে নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য কিনতে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হাজেরা সিরাজী ও শাহনাজ আক্তার। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাজেটে টান পড়েছে তাদের। তাই কেনাকাটায় করতে হয়েছে কাটছাঁট করে।

মিরপুর থেকে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুর রহমানও বাজার করতে এসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এই বাজারে ঘুরছিলেন রামপুরা থেকে আসা আয়েশা বেগম। পেশায় গৃহিণী। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। কী কী কিনলেন জিজ্ঞেস করতেই একটু বিরক্ত হলেন।

তিনি ১৫ দিন পরে বাজারে এসেছেন। তিনি মাসে ২ বার কারওয়ান বাজার থেকে কেনাকাটা করেন। তা দিয়ে পুরোমাস চলে। বিরক্তির সুরে আয়েশা বলেন, এ দেশে সবকিছুর দাম বাড়ে, শুধু মানুষের দাম বাড়ে না।

এদিকে, অস্থিরতা কমেনি ভোজ্য তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে। এখনো প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম দুই হাজার ডলারের ঘরে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দাম বাড়লেও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় তা কম। ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে, ভারত, পাকিস্তান, নেপালে তেলের দাম বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। তবে দেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি আন্তর্জাতিক বাজারকে দায়ী করে বলেছেন, ‘আমাদের দেশে বৈশ্বিক প্রভাব পড়েছে, সাশ্রয়ী হতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম না কমলে কিছুই করতে পারব না।’

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভায় বাণিজ্যসচিব তপান কান্তি ঘোষ, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও এফবিসিসিআইসহ খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গত ৫ মে ভোজ্য তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম। আমদানিকারকরা বলেছেন, সাপ্লাই, পাইপলাইন, এলসি ও দেশে যা আছে সেটা আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঠিক আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে আমাদের, চিন্তার কোনো কারণ নেই। সব সাপ্লাই ঠিক আছে। আলোচনায় একটা কথা এসেছে- কোথাও কোথাও দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। ভোক্তা অধিকার গিয়ে জরিমানা করছে। ভোক্তা অধিকার শুধু সেসব জায়গাতেই জরিমানা করেছে, যেগুলো আগের মজুদ করা, যেটা দাম লেখা আছে ১৬০ টাকা। সেটা কমে এসেছে। আমরা চাই না বাজারে ভয়ভীতি সৃষ্টি করা। মিলিতভাবেই সমস্যার সমাধান করতে হবে। সাপ্লাই চেইন স্বাভাবিক হয়ে গেছে, সমস্যার কিছু নেই।’

আমরা কি শুধু সয়াবিন বা পাম অয়েলের ওপর নির্ভর করব কি না- প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের দেশে তেলের দাম বেড়েছে। প্রতিনিয়তই দাম বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা বিকল্প বাজারে যাব না। দেশেই সরিষা ও রাইস ব্রান তেলের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করব। আমরা যদি অনেক চাপ দিই তাহলে রাইস ব্রান থেকে সাত লাখ টন তেল উৎপাদান সম্ভব। রাইস ব্রান রপ্তানি বন্ধ করার বিষয়ে চিন্তা করা যেতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, এর দাম কেমন হবে। বেশি হলে চলবে না। কাছাকাছি থাকতে হবে।’

ডলারের দাম বাড়ায় সমস্যা তৈরির বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দুই বছর আমদানি কম ছিল। এখন খুলে যাওয়ায় ক্যাপিটালে প্রভাব পড়েছে, দুই বছরের চাপ পড়েছে একসঙ্গে। সবকিছু মিলে একটা প্রভাব পড়েছে। আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভে চাপ পড়েছে। গত দুই বছর আমদানি কমায় বেড়েছিল রিজার্ভ। এখন চাপ পড়ায় এই সমস্যা হচ্ছে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় বিপদ বলে আমাদের বিপদ তা তো নয়। আমরা তো তাদের সহায়তা করেছি। আমাদের ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী এটি নিয়ে সুন্দরভাবে বলেছেন আমাদের দেশে বৈশ্বিক প্রভাব পড়েছে, সাশ্রয়ী হতে হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close