বন্যা... বন্যা এবং ...
প্রতিবেশীর বদান্যতায় ফি বছর বন্যা হবে। আমাদের উদাসীনতায় তা কখনোই প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। উজানের পানির প্রবল চাপে সারা দেশের বন্যা পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। ইতোমধ্যেই দুর্যোগকবলিত এলাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফসলহানির কথা নাইবা বললাম। নাইবা বললাম জনদুর্ভোগের কথা। এবারের বন্যা ১৯৮৮ সালের বন্যার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং হচ্ছে তারই ফলে এই বন্যা। অনেকে আবার এই বন্যাকে আকস্মিক হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, এ বন্যা আকস্মিক নয়। অনেকটা পরিকল্পিত। আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে ভারত উজানের প্রায় প্রতিটি নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে বিনষ্ট করেছে। শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে রেখে একতরফা ব্যবহার এবং বর্ষা মৌসুমে একসঙ্গে বাঁধের সব মুখ খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদে ফেলছে। কমবেশি প্রতিবছরই বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বন্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞ আর বিশ্লেষকরাও একই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
সম্ভবত বন্যা নিয়ে ভাববার সময়সীমা শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এবারের বন্যা নিয়ে নতুন করে ভাববার কিছু নেই। ভাবতে হবে আগামী বন্যার কথা। এবারের বন্যায় মাঠেঘাটে যে গুঞ্জন, তা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয়। এবারের বন্যায় ইতোমধ্যে যে ফসলহানি হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। ক্ষতির ক্ষত কখনোই মলম দিয়ে সারানো যায় না। সারানো যায় না কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার অথবা সার্জারি করে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে এবং হবে। একে আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এ দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবারের মতো দুঃখ আর কষ্টের বোঝা মাথায় করে দুর্বিষহ যন্ত্রণার বন্যাকে অতিক্রম করবে। কিন্তু তারপর! আগামী বর্ষায়ও কি একই পরিণতির দিকে তাকিয়ে তাদেরকে চাষাবাদে মনোযোগী হতে হবে? তাদের কাছে কোনো বিকল্প নেই বিধায় তারা তা করতে বাধ্য হবেন। কিন্তু খাদ্যে ঘাটতি দেখা দিলে তা পূরণ করবে কে? বন্যায় এভাবে বারবার আক্রান্ত হতে থাকলে এ ঘাটতি পূরণ করা কখনোই কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। আমরা মনে করি, জরুরিভিত্তিতে এর একটা সমাধান হওয়া দরকার। সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবে।
"