বুশরা ই জান্নাত

  ১২ মে, ২০২৪

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস

মর্যাদা ও জীবনমান উন্নত হোক

আজ ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। আজকের এই বিশেষ দিনে বিশ্বের সব নার্সকে সম্মান জানাই। তারা তাদের জীবন বাজি রেখে রোগীদের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছেন। অনেকে মনে করেন, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা হলেন ডাক্তার, কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্য নয়। নার্সরা সর্বদা রোগীদের কল্যাণে, সুরক্ষায় ও সুস্থ হয়ে ওঠার ব্যাপারে সব চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নার্সদের প্রচুর দক্ষতার দরকার হয়। তারা সর্বদা সিদ্ধান্তমূলকভাবে কঠিন পরিবেশে কাজ করেন। নার্সরা অসুস্থ ও আহতদের অক্লান্ত পরিচর্যা করেন।

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস-২০২৪ উপলক্ষে ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস (আইসিএন) প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছেন ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ। অর্থনৈতিক শক্তি, নার্সিং সেবার ভিত্তি।’

আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালনের উদ্দেশ্য বিশ্বের সব নার্সের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো। ১৯৫৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কল্যাণ বিভাগের কর্মকর্তা ডরোথি সাদারল্যান্ড তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডোয়াইট ডি. আইসেনহাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং একটি ‘নার্স দিবস’ ঘোষণা করার প্রস্তাব রাখেন। তবে সে সময় তিনি তার প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। ১২ মে সব নার্সের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তারিখ। কারণ এটি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মবার্ষিকী, যিনি আধুনিক নার্সিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব নার্সেস ১৯৬৫ সাল থেকে দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছে। অবশেষে ১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে এই দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর দিনটি উদযাপিত হয়ে আসছে।

ব্রিটিশ সমাজ সংস্কারক ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ক্রিমিয়া যুদ্ধের সময় (১৮৫৩-১৮৫৬) নার্সদের প্রশিক্ষক ও ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধে আহত সৈন্যদের যত্নের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে তিনি ভিক্টোরিয়ান যুগের সংস্কৃতির আইকন হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ১৮৬০ সালে একটি নার্সিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করে পেশাদার নার্সিংয়ের ভিত্তি স্থাপন করেন। এটি ছিল লন্ডনে সেন্ট টমাস হাসপাতালে। আজ এটি কিংস কলেজ লন্ডনের অংশ। তখন এটি ছিল বিশ্বের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ নার্সিং স্কুল। তার সামাজিক সংস্কারের মধ্যে রয়েছে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ সম্প্রসারণ এবং পতিতাবৃত্তি আইন নির্মূলে সহায়তা করা, যা মহিলাদের জন্য কঠিন ছিল।

বাংলাদেশে বর্তমানে নার্সিং পেশার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। গত ২০১১ সাল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সিনিয়র স্টাফ নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছে। নার্সিংয়ে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় ২০১৬ সালে জাতীয় নার্সিং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৮ সালের ১২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। সেখানে নার্সিংয়ের ছয়টি ডিসিপ্লিনে মাস্টার্স করানো হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০২২ সালে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি কলেজও মাস্টার্স কোর্স চালু করেছে।

চলতি বছর থেকে (২০২৪) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নার্সিংয়ে

পিএইচডি কোর্সও চালু করা হয়। এত দিন পিএইচডি করতে হলে দেশের বাইরে যেতে হতো।

সরকারি নার্সিং কলেজগুলোতে এখনো পিএসসির মাধ্যমে প্রভাষক নিয়োগ শুরু হয়নি। এটা এখন সময়ের দাবি। আশা করি অচিরেই পিএসসির মাধ্যমে যোগ্যদের নিয়োগ দেওয়া হবে।

একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানদ- ৮০ শতাংশ নার্সিং সেবার মানের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় যুগ যুগ ধরে নার্সিং খাত অনেক অবদান রেখে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সব অর্জন যেমন মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হার কমানো, করোনা মোকাবিলায় নার্সদের আত্মত্যাগ ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মতৎপরতা দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের যে দায়িত্ববোধ তাই প্রমাণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ডাক্তার ও নার্সের অনুপাত ১:৩ থাকার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় এখনো নার্সদের সংখ্যা অনেক কম। তবে বর্তমান সরকার বিগত কয়েক বছরে অনেক নার্স নিয়োগ দিয়েছে।

নার্সদের কাছে রোগী ও রোগীর লোকজন ব্যথা-বেদনার কথা বলে, অসহায়ত্বের কথা বলে, না পাওয়ার কথা বলে। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে সব কথা শুনে তাদের সান্ত¦না দিতে হয়। শত অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ততা থাকার পরও সবার চাহিদা কমবেশি মিটাতে তারা চেষ্টা করেন। রোগী ও রোগীর লোকদের যত কান্না, যত আহাজরি, যত অভাব, যত অভিযোগ সব নার্সকে শুনতে হয়। নার্সদের হতে হয় অনেক ধৈর্যের অধিকারী। নার্সরাই যেন রোগীদের আপনজন।

নার্সিং পেশায় জড়িত সবার মর্যাদা ও জীবনমান উন্নত হোক- এটিই আজকের দিনের প্রত্যাশা। পৃথিবীর সব নার্স ভালো থাকলে রোগীরাও ভালো থাকবে।

লেখক : প্রভাষক, গ্র্যাজুয়েট নার্সিং ডিপার্টমেন্ট

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close