reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

আজ ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। এই দিনটি বাঙালি জাতির জীবনে একটি অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়।

বলা সংগত, আমাদের এ দেশ, এ দেশের মানুষ হাজার বছর ধরে বিদেশি হানাদারদের কবলে পড়েছে। অত্যাচারিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়েছিল। কিন্তু তারা মাথা নোয়ায়নি। শত্রুর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, লড়াই করেছে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়ে ৫৪-এর যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলনের পর ৬৬-তে ৬ দফার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতির মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। এরপর ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। যার ফলে ৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। যে নির্বাচনে বাঙালি স্বাধীনতার পক্ষে তাদের আকাঙ্ক্ষাটি জানিয়ে দেয়। তারপর তারা পথে নেমে আসে। স্লোগান তোলে : ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। জনতার মনের আকাঙ্ক্ষাটি বহু আগে থেকেই জানতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাই তিনি ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারা দেশে অপারেশন সার্চলাইট নামে ইতিহাসের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। তাৎক্ষণিক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরপরই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান সর্বাত্মক জনযুদ্ধকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভারতে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্র রূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে প্রবাসী সরকারের এক অধ্যাদেশে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ এপ্রিল তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় এ সরকার শপথ গ্রহণ করে। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দায় শোধ হয়েছিল মুজিবনগর সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে। সেদিন বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছিল। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল একটি ঐতিহাসিক ধাপ পেরিয়েছিল বাংলাদেশ।

বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণার কেন্দ্রে ধারণ করে, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক মুজিবনগর সরকার দেশপ্রেমিক মুক্তিপাগল জনতাকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধকে একটি সফল জনযুদ্ধে পরিণত করে। আন্তর্জাতিক সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ে তারা অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ফলে ৯ মাসেরও কম সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের গুরুত্ব ও অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই ঐতিহাসিক দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাকে। যাদের অবিরাম ত্যাগের ফসল এই বাংলাদেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close