মাহবুবুর রহমান সুজন

  ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তমত

শিক্ষার নামে বাণিজ্য বন্ধ হোক

শিক্ষা ও বাণিজ্য দুটি শব্দের আলাদা অর্থ এবং লক্ষ্য রয়েছে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানো। শিক্ষার্থীদের কর্মে, মননে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। বাণিজ্যের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন। দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষাকে অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম হিসেবে ধরে নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছে অনেকেই। বাংলাদেশে প্লে-নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষার নামে বাণিজ্যের যে প্রতিযোগিতা তা বেড়েই চলছে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভর্তি, বেতনসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক ফি সরকারি নিয়মনীতির মধ্যে রাখতে বাধ্য হলেও ব্যতিক্রম বেসরকারি এবং প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিশেষ করে প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর যে হালচাল মাঝেমধ্যে আমাদের চোখে পড়ে একটি বিল্ডিং ভাড়াতে চলছে দুটি স্কুল কিংবা পাশাপাশি দুটি কিংবা তার অধিক স্কুলের কার্যক্রম। আমাদের দেশে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস এলে শুরু হয় ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে তোলা তথাকথিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভর্তি বিজ্ঞাপন। মাঝেমধ্যে হাস্যরসাত্মকভাবে বলি অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ, হার্ভার্ডে এত টাকা খরচ করে এত পরিশ্রম করে যাওয়ার মানে হয় না। আমাদের দেশে অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ অলিগলিতে আছে। আমি বোঝাতে চাইছি, ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামও হয় বেশ আকর্ষণীয়, বিশ্বের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে। সন্তানকে সুশিক্ষিত করার নামে নজরকাড়া বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে চলে তাদের ব্যবসা। নামমাত্র বেতনে অনভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান চলছে।

‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ এই বাক্যটির সঙ্গে ছোটকাল থেকে পরিচিত। শিক্ষা পাঁচটি মৌলিক অধিকারে মধ্যে একটি। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত। বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে। সরকার শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু ব্যক্তি-মালিকানায় অথবা অংশীদারত্বের মাধ্যমে গড়ে তোলা শিক্ষার নামে যে ব্যবসা চলছে, তা দেখার যেন কেউ নেই। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। যেনতেনভাবে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানগুলোয় তাদের ইচ্ছামতো ভর্তি ফি, বেতনসহ নানা উপলক্ষে অর্থের লেনদেন হয়। তথাকথিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ না থাকলেও টাকাপয়সার লেনদেন চলে ব্যবসার মতো। উচ্চহারে মাসিক বেতনের বাইরেও পরীক্ষাসহ নানা অজুহাতে ফি আদায় করে। সরকারি, স্বায়িত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সিটসংকুলানসহ নানা কারণে অভিভাবকরা একপ্রকার বাধ্য হয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করান তাদের সন্তানদের। অনেক অভিভাবক সংসার চালানোর খরচের চেয়ে সন্তানদের শিক্ষার পেছনের ব্যয় নিয়ে চিন্তিত থাকেন। বাংলাদেশে কত হাজার কিন্ডারগার্টেন এবং প্রাইভেট স্কুল আছে তার সঠিক হিসাব হয়তো কারো জানা নেই। এটি জানা থাকার কথাও না। কারণ এসবের কোনো অনুমোদন দরকার হয় বলে মনে হয় না। বোর্ডের আওতাভুক্ত না হওয়ায় অনেক স্কুল প্লে থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে বোর্ড পরীক্ষার সময় বোর্ডের আওতাভুক্ত যেকোনো একটি স্কুলের সঙ্গে চুক্তি করে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের সরকারি নিয়ম নীতিমালা তোয়াক্কা করার কোনো সময় যেন হাতে নেই। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান নিজেরা নিজেদের নিয়মনীতি তৈরি করে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোচিং প্রতিটি স্তরে শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণ হিসেবে ধরে নিয়েছে একটি চক্র।

একজন আদর্শবান শিক্ষক হাজারো আদর্শবান নাগরিক তৈরি করতে পারেন। শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। এই পেশার সঙ্গে ব্যবসার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা সম্মানিত এই পেশার সঙ্গে ব্যবসায়িক মনোভাব পোষণ করে তাদের চিহ্নত করতে হবে। সরকারের উচিত প্রাইভেট/কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে নজরদারি বাড়ানো এবং নির্দিষ্ট একটি নীতিমালা তৈরি করা। এসব বন্ধ করা না গেলে বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে যাবে।

লেখক : সংগঠক ও কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close