উম্মে সাবাইনা সুলতানা

  ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তমত

বৃক্ষরোপণ জরুরি নাকি সঠিকভাবে বৃক্ষরোপণ জরুরি

বর্তমানে পরিবেশদূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা চিন্তাবিদদের প্রধান আগ্রহ স্থল। এসব সমস?্যার সমাধান করতে পারা যাবে যদি সঠিকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়। বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সবুজ গাছপালা ছাড়া এই বিশাল পৃথিবী কল্পনাই করা যায় না। বৃক্ষ অতি সহজে অক্সিজেন উৎপাদন করে আর কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে নেয়। যেহেতু অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব না তাই বৃক্ষরোপণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে বৃক্ষরোপণ করা। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে। বেশির ভাগ গাছই পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন?্য সুফল বয়ে আনে। তবে বেশ কিছু গাছ রয়েছে, যা আমাদের জন?্য ক্ষতিকর। এসব গাছের ক্ষতিকর দিক না জেনেই আমরা আমাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর গাছ রোপণ করে যাচ্ছি। কিছু প্রজাতির গাছ আছে যেগুলো দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু বাস্তবে এগুলো প্রাণঘাতী বিষাক্ত গাছ। এর ফলে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতিও হচ্ছে। বেশ কিছু ক্ষতিকর গাছের তালিকা নিচে দেওয়া হলো :

পাতাবাহার : পাতাবাহার বলতেই একটি নিরীহ সুন্দর গাছের কথা মনে পড়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে পাতাবাহার অত্যন্ত বিষাক্ত একটি গাছ। পাতাবাহারের সবগুলো প্রজাতি অত্যন্ত ক্ষতিকর। যদিও এটি ঘরের শোভা বাড়ায় কিন্তু একটু একটু করে চারপাশের মানুষের ক্ষতি করে গ্রিক গল্গের ট্রোজান হর্সের মতো। এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা মতে, এই গাছের যেকোনো অংশ খাওয়ার বা গলায় যাওয়ার এক মিনিটের মধ্যে একটি শিশুর মৃত্যু হতে পারে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু হতে পারে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই। এমনকি শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগব?্যাধি ঘটায়। প্রায় সবার বাড়িতে এই বিষাক্ত গাছটি রয়েছে। আজকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায়ই এই গাছটি দেখা যায়। এমনকি অনেক হাসপাতাল ও রেস্টুরেন্টের সামনেও এই গাছ রয়েছে। আমাদের সবাই এই গাছ থেকে সাবধান হওয়া উচিত।

ধুতুরা : ধুতুরা ফুল দেখতে আকর্ষণীয় হলেও একে মৃত্যুর ফাঁদ বলা যেতে পারে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ডাতুরা স্ট্রামোনিয়াম। এই ফুলে রয়েছে অ?্যালকালয়েড নামের এক প্রকার বিষ, যা শরীরে হ?্যালুসিনেশন সৃষ্টি করে। এ ছাড়া এটি খেলে শরীরে খিঁচুনি হতে পারে। তাই ধুতুরা গাছ রোপণ না করাই ভালো।

রেড়িগাছ : এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম রিসিনাস কমিউনিস। যদিও এই গাছের তেল সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে ব?্যবহার করা হয় কিন্তু এর বীজে রিকিন নামক বিষ থাকে। এই বীজ ভক্ষণের ফলে রক্তপাত ও বমি হতে পারে। অবস্থার অবনতি হলে রক্ত সঞ্চালনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

চূড়ামণি : নিরীহ প্রজাতির গাছ মনে হলেও এটিও একটি বিষাক্ত উদ্ভিদ। এতে রয়েছে এব্রিন নামক বিষ, যা রাইবোজোম দমন করে থাকে। তবে এটির বীজ অক্ষত অবস্থায় ক্ষতিকর নয়। কিন্তু যখন এর বীজটি ফেটে যায় বা চিবানো যায় তখন এটি প্রাণঘাতী বিষে পরিণত হয়।

ইউক?্যালিপটাস : বাংলাদেশে এই গাছটি নীলগিরি নামেও পরিচিত। সাধারণত মাটির গুণগত কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এই প্রজাতির গাছ রোপণের প্রবণতা দেখা যায়। বাংলাদেশের মাটি, জলবায়ু ও পরিবেশের জন্য দ্রুত বর্ধনশীল এই গাছটি মারাত্মক ক্ষতিকর।

তামাক : তামাক অত্যন্ত ক্ষতিকর এক উদ্ভিদ। এর পাতায় থাকে অ?্যালকালয়েডস নিকোটিন, যা সরাসরি গ্রহণ করা মৃত্যুর কারণও হতে পারে। এই নিকোটিন থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক দ্রব?্য তৈরি করা হয় যা স্বাস্থ্যহানি করে। এর থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া পরিবেশ দূষণ ঘটায়। তাই বিশ্বব?্যাপী তামাক চাষ রোধ করতে হবে।

বৃক্ষরোপণের সময় পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন গাছ রোপণ না করে ঔষধি গাছ রোপণ করা উচিত। এর পাশাপাশি মাটির গুণাবলি যাতে ঠিক থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখা উচিত। কয়েকটি ঔষধি গাছের উল্লেখ করা হলো, যেমন : পাথরকুচি, লজ্জাবতী, স্বর্ণলতা, থানকুনি, অর্জুন, ভাঁটফুল, তোকমা, জবা ও নিম।

মনে রাখতে হবে, বৃক্ষরোপণের প্রধান উদ্দেশ্য যখন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা তখন আমাদের সতর্কতার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ করা উচিত। যেকোনো বৃক্ষরোপণের আগে ওই বৃক্ষ সম্পর্কে আমাদের পূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। যেন ক্ষতিকর বৃক্ষ রোপণ করে আমরা পরিবেশের আরো বেশি ক্ষতি না করে ফেলি।

লেখক : শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close