reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ মার্চ, ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বাড়ছে জীবনের ঝুঁকি

রাজধানীতে অন্তত ১০টি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গত ১৪ বছরে। নীমতলী, চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের পর সর্বশেষ বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ড। এই চারটি ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৬৭ জনের। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটসহ ঢাকায় বেশ কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনার পরই অনেক কথা হয়, কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয় না। বিচারের আওতায় আসে না দায়ীরা।

ওই ঘটনাগুলোর জন্য কারোই শাস্তি হওয়ার নজির নেই। প্রতিটি ঘটনায় একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোনো তদন্তই আলোর মুখ দেখেনি। বরং যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আইন আছে, কিন্তু অর্থের বিনিময়ে ভবন মালিকরা ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন নিয়ে নেন। আবার ভবন নির্মাণের পর অর্থের বিনিময়ে আইন লঙ্ঘন করেও পার পেয়ে যান। কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই এই অবৈধ কাজ চলে। এমন অনিয়ম ও গাফিলতির ফলে একের পর এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আর বিচারহীনতায় পার পেয়ে যায় দায়ীরা। যেসব ঘটনায় মামলা হয়েছে, তার আসামিরাও দ্রুত জামিন পেয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। এমন বিচারহীনতা ও দায়বদ্ধতার অভাবেই সর্বশেষ বেইলি রোডের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কাড়ল ৪৬ প্রাণ। বেইলি রোডের পুড়ে যাওয়া ভবনটির মতো একই ধরনের অনিয়ম আর অবহেলা চলে আসছে বহু ভবনেই। খালি চোখেই ধরা পড়ে সেসব নিয়ম লঙ্ঘনের নানা চিত্র। বেইলি রোডের দুর্ঘটনার পর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আসলে কী করে- সেই প্রশ্ন নতুন করে উঠছে। এই তিনটি এলাকার চিত্র সেই প্রশ্ন আরো বড় করবে। তবে কেবল এই তিন এলাকা নয়, গোটা রাজধানীতেই আসলে একই চিত্র মিলবে। আবাসিক ভবনের নিচতলায় যেখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকার কথা, সেখানেও রেস্তোরাঁ বসানোর ঘটনা দেখা যায় অহরহ।

অনুমোদিত নকশা না মেনে নির্মাণ করায় অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকার ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভবন। ফায়ার সার্ভিস বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ব্যাংক, মার্কেট, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন ছাড়াও এই ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় সরকারি ও বেসরকারি অফিসও রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ২০২২ সালে ঢাকার ১,১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে। এর মধ্যে ৬৩৫টি ভবনকে ঝুঁঁকিপূর্ণ, ১৩৬টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে নোটিস দেয়। একই সঙ্গে সারা দেশে ৫,৮৬৮ ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। তার মধ্যে ২,২২৩টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। সেই বিবেচনায় সারা দেশে ৩৮ শতাংশ ভবন আগুনের ঝুঁঁকিতে আছে। ২০২৩ সালে ২ হাজারের মতো ভবন ঢাকায় পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। সেখানেও অর্ধেকের বেশি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। কিন্তু এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করেননি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজধানীসহ দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে। প্রশাসনের নাগের ডগায় নিয়মনীতি না মেনে ভবন নির্মিত হবে এবং সেই ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত হবে, আর একের পার এক দুর্ঘটনা ঘটে যাবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করি, সর্বশেষ বেইলি রোডের ঘটনাকে আমলে নিয়ে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close