ওমর ফারুক
মুক্তমত
২৯ ফেব্রুয়ারির জ্বলন্ত বেইলি রোড
এমন ২৯ ফেব্রুয়ারি আর না আসুক! কত স্বপ্ন, কত আশা, কত পরিকল্পনা এবং কত পরিবারের স্বজন-পরিজন হারিয়ে গেছে। আগুনে দগ্ধ হয়ে কয়লা হয়ে গেছে। সেই পরিবারের মানুষগুলো কীভাবে নিজেকে সান্ত¦না দেবে? কত মা-বাবার বুক খালি হয়েছে। নিষ্পাপ শিশু আগুনে জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়েছে। চোখের জল থামছে না মানুষের। হৃদয় হুহু করে ক্রন্দন করছে। কত ভাই-বোনের লাশ এখনো মর্গে পড়ে আছে। চিহ্নিত করতে পারেনি এখনো পর্যন্ত। বেইলি রোড অনেকের স্মৃতিতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যে স্মৃতি বুকের বাম পাশে পিনপিন কষ্ট দেবে। মনে পড়লেই মন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে।
কীাবে মনকে বুঝ দেবে জানি না। কত খুশি মনে জন্মদিন উপভোগ করতে গেছে। ফিরছে মৃত নিথর দেহ নিয়ে। ইতালি যাবে, তাই পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে গেছে। ফিরছে আগুনে জ্বলে নিঃশ্বাস হারিয়ে। যেখানে গ্রিনকার্ড নিয়ে ইউরোপ ঘোরার কথা। অথচ সেই ভাই ও তার পরিবার পুরো দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। বেইলি রোডের সেই মার্কেটের কর্মচারীরা পরিবারের জন্য রাত-দিন এক করে পরিশ্রম করছেন। কিন্তু কে জানত সেই পরিবারের মুখে এমন কান্নার রুল পড়বে। জীবিকা নির্বাহের বটবৃক্ষ হারিয়েছে। অজর নয়নে চোখের জল ফেলছে। চোখ ফুলে গেছে স্বজনের আহাজারিতে। মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
২৯ তারিখ রাতে সেদিন সূর্যের জ্বলন্ত অগ্নির মতো জ্বলছে মার্কেট। পৃথিবীর সব আগুন যেন পরিবার পরিজন হারানো মানুষের অন্তর্দেশে লাগছে। আহ জীবন! কত রঙিন স্বপ্ন ছিল তাদের। উষসী থেকে ভোর পর্যন্ত পড়াশোনা করে বুয়েটে জায়গা করে নিয়েছে। দেশের সবচেয়ে বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরিবার গর্ব করে বলত আমার ছেলে বুয়েটে পড়ে। আমার মেয়ে বুয়েটে পড়ে। নাহিয়ান ভাই ও লামিশা আপু। আপনারা আমাদের ক্ষমা করুন। নাহিয়ান ভাইয়ের বন্ধু জুনায়েদ উল্লেখ করেন, নাহিয়ান বলছিল, ‘এখানে থাকলে এক দিন হয় রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাব। না হলে আগুনে পুড়ে।’ এত তাড়াতাড়ি নাহিয়ান ভাইয়ের কথা সত্যি হবে তা কেউ কল্পনাও করেনি। সেই বুয়েটের নাহিয়ান ও লামিশা আপু মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করেছে বেইলি রোডে! কীভাবে স্থির থাকবেন তাদের আত্মীয়স্বজনরা?
সেই মার্কেটের কর্মচারী! যার অক্লান্ত পরিশ্রমে সংসার চলেছে। রাতে নাইট ডিউটি করেছে। ওভারটাইমে কাজ করেছে। নিচের ফ্লোর থেকে শেষ ওপরের ফ্লোর পর্যন্ত চষে বেড়িয়েছে। পরিবারের আহার জোগাড় করেছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার অর্থ দিয়েছে। পরিবারকে উৎফুল্ল ও প্রফুল্ল রাখতে চেয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছে এই ভেবে এক দিন শান্তি আসবে। আগুনে সব শান্তি কেড়ে নেবে জানত না। জানত না জীবন যেখানে যেমন। সেই কর্ম ক্ষেত্র থেকে ফিরছেন নিথর দেহ নিয়ে। টাকার মেশিন অদৃশ্য হয়েছে পরিবারের। সৃষ্টিকর্তা এমন লিখন কেন লিখেছিলেন? কেন তাদের এমন যন্ত্রণাময় মৃত্যু দান করল? দুনিয়ায় সবকিছুর শাস্তি দিয়েছিল।
ভর্তি পরীক্ষার খরচ জোগাড় করতে নাঈম প্রহরীর চাকরি নিয়েছিল। সেই নাঈম মৃত্যুর তালিকায় ভর্তি হয়ে সারা জীবনের মতো চলে গেছে। এমন ভাগ্য জীবনে লেখাছিল জানলে নাঈম আজ কোথায় থাকত? নাঈম আমাদের ক্ষমা করিস ভাই। মর্গে লাশ পড়ে আছে এক আপুর। এখনো শনাক্ত হয়নি কোন ধর্মের তিনি। এমন অবস্থা হয়েছে আগুনে। আগুন লাগার ঘটনা এবার নতুন নয়। আমাদের দেশে এমন ঘটনা চলমান। দেশের আরো কিছু আগুন নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা উন্নত করা দরকার। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ভাইরা যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়েছে। তবুও বহুজনের ঠিকানা হয়েছে মর্গে। সৃষ্টিকর্তা এমন কষ্ট কাউকে না দিক। তার কাচে সেই কামনা। এমন মৃত্যু কেউ সহ্য করতে পারবে না।
আমাদের জীবন লতাণ্ডপাতার সঙ্গে লেগেও চলে যেতে পারে। এই মৃত্যু আমরা চাই না মহান রব। এমন মৃত্যু কাম্য নয়। যে মৃত্যুতে জাতি স্তব্ধ ও বাকরুদ্ধ! ভবন নির্মাণের সময় বেশি বেশি চিন্তা করুন। যাতায়াত সুবিধা অতিরিক্ত রাখুন। পানির কথা তো শুরুতেই মগজে গাঁথুন। কেননা, পর্যাপ্ত পানি জমায়েত থাকলে হয়তো এত মানুষের জীবন কাল হতো না। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অন্তত কৃত্রিম কংক্রিটের দালানের সঙ্গে লেপ্টে জ্বলে মরতে চাই না। ভবন নির্মাণের সময় সহস্রবার ভাবুন। আমাদের রক্ষা করুন। নিজে বাঁচুন। অন্যকে বাঁচতে সাহায্য করুন। মহান রব সব পরিবারকে হেফাজত করুক। সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। চোখ বুঝে হাহাকারে পূর্ণ হৃদয়কে সান্ত¦না দিচ্ছি। সুস্থ থাকুন! শান্তিতে থাকুন! অন্যকে শান্তি দিন!
লেখক : শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
"