reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ মার্চ, ২০২৪

অগ্নিনিরাপাত্তা নিয়ে উদাসীনতা কেন?

অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মারা যাওয়ার পর জানা গেল রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের সাততলা ভবনটি নির্মাণে মানা হয়নি ইমারত বিধিমালা। ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না। শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা নিয়েও ভবন কর্তৃপক্ষের ছিল উদাসীনতা। নিয়মানুযায়ী কোনো বহুতল ভবন তৈরি করা হলে সিঁড়ি থাকতে হয় দুটি, সেই সঙ্গে থাকতে হয় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা এবং জরুরি নির্গমন পথ। কিন্তু এই ভবনটিতে ছিল না তার কোনোটিই।

রাজউকের ভাষ্য, প্ল্যান অনুযায়ী যথাযথ নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হয়েছে ভবনটি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তিনবার নোটিস দেওয়া হয়েছিল মালিকপক্ষকে; কিন্তু এর কোনো তোয়াক্কাই করেনি তারা। সিটি করপোরেশনের মতে, ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী থেকে স্থপতি ও মালিক সবাই দায়ী। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজধানীর গুরুত্ব একটি স্থানে এতসব অনিয়ম নিয়ে কীভাবে বছরের পর বছর একটি ভবনে কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে? একটি ভবন নির্মাণের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে অনেকগুলো সংস্থা জড়িত থাকে। এত দিন কেন কারো চোখেই পড়ল না এতসব অনিয়মের বিষয়টি? অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে উদাসীনতার কারণেই এতগুলো মানুষের মৃত্যু হয়েছে। শুধু বেইলি রোডের এ ঘটনাতেই নয়, এর আগের অগ্নিদুর্ঘটনাগুলো থেকেও জানা গিয়েছিল এভাবে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কথা। একটা ঘটনা ঘটার পর চারদিকে বেশ তোড়জোড় শুরু হয়; কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। কয়েক দিন পর আবার সব থেমে যায়, নেওয়া হয় না কার্যকর কোনো ব্যবস্থা। এরপর আবার ঘটে দুর্ঘটনা, আবার মারা যায় নিরীহ মানুষ। কারো গাফিলতিতে এভাবে মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

২০১০ সালের ৩ জুন রাতে পুরান ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের গুদাম থেকে ছড়ানো আগুনে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টায় রাসায়নিক গুদামে আগুনে প্রাণ হারান ৭১ জন। একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনে ২৭ জন প্রাণ হারান। সব শেষ গত বৃহস্পতিবার বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডে মারা গেল ৪৬ জন। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বড় ৪ আগুনে প্রাণ হারিয়েছেন ২৬৮ জন। এই মৃত্যু শুধুই অবহেলা আর গাফিলতির কারণে। কারো ভেতরে কোনো নিয়ম মানার প্রবণতা নেই। বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে অগ্নিনির্গমন পথ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শুক্রবার ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি বলেন, ‘আমরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা করেছি; তবুও মানুষ এতটা সচেতন নয়। কোনো ভবন বা স্থাপনা তৈরির সময় স্থাপত্যবিদদের অনুরোধ করি- যেন খোলা বারান্দা বা ভেন্টিলেশন ও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু স্থাপত্যবিদরা সেভাবে নকশা করেন না; আবার মালিকরা এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়তে চান না।’

একটি বিষয় লক্ষণীয়, দেশে ভবন নির্মাণে ইমারত বিধিমালাগুলো ন্যক্কারজনকভাবে লঙ্ঘন করা হয়, তদারকিতেও থাকে গাফিলতি। অনেক ক্ষেত্রে নকশা ঠিক থাকলেও ভবন নির্মাণে অনিয়ম করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভবন নির্মাণে নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকে। বিশেষত অগ্নিকাণ্ড বা ভূমিকম্পে নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীনতা মেনে নেওয়া যায় না। ভবন নির্মাণে প্রকৌশলী থেকে স্থপতি এবং মালিক- সবাইকেই ইমারত বিধিমালাগুলো মানার ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close