reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি

তামাক যে স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ, সেটি মোটামুটি সবাই কমবেশি জানেন। শুধু ধূমপায়ী ব্যক্তিই নন, এই ক্ষতির শিকার হন তার আশপাশে যারা থাকেন, পরোক্ষ ধূমপায়ী হিসেবে তারাও। ধূমপানের কারণে ধূমপায়ী ব্যক্তি ছাড়াও রাষ্ট্রকেও বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়।

তামাকজনিত রোগে প্রতি বছর দেশে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যু প্রতিরোধে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন। কারণ যত দিন যাবে তত তামাকজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। গত শনিবার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের হলরুমে আয়োজিত ‘তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকদের ভূমিকা : পরিপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। ওই সেমিনারে বলা হয়, দেহের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তামাক। বাংলাদেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিকপ্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যানসার, বক্ষব্যাধি এবং অন্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ।

তামাক দিয়ে শুধু বিড়ি, সিগারেটই তৈরি হয় না, বরং জর্দা, গুল, চুরুট, হুক্কা ইত্যাদি তৈরি হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায়, এ দুই ধরনের তামাকই দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় ৭ হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে, যার মধ্যে ৭০টি রাসায়নিক পদার্থ সরাসরি ক্যানসার হওয়ার জন্য দায়ী। তামাকপাতায় পাঁচ হাজার টক্সিন থাকে; বিশেষ করে নিকোটিন মানব শরীরে প্রবেশ করে নানা জটিল রোগ তৈরি করে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে। বাংলাদেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ফুসফুস ও শ্বাসনালির দীর্ঘস্থায়ী রোগ বাড়ছে, বাড়ছে হৃদরোগও। গবেষকরা এসবের সঙ্গে তামাকের সম্পর্ক দেখতে পাচ্ছেন। এসব রোগে আক্রান্ত মানুষ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তাদের চিকিৎসায় রাষ্ট্রকেও বিপুল ব্যয় করতে হয়। তামাক ব্যবহারের দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর অর্থ বাংলাদেশে ধূমপান নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কার্যকর হচ্ছে না। তামাকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতেও আমাদের সফলতা কম। সারা পৃথিবীতে, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও তামাকের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু আমরা করছি উল্টোটা। তামাকের নানান ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষার জন্য দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে তামাকজনিত এই অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের একযোগে কাজ করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। তারা রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও তামাক ব্যবহার ছেড়ে দিতে উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে তামাক ব্যবহারে জনসাধারণ নিরুৎসাহিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা বাস্তবায়নে এখন থেকেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তামাক নির্মূলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইন সংশোধন যত দেরি হবে, তামাকজনিত মৃত্যু ততই বাড়তে থাকবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close