reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

নারীশ্রমিকের পক্ষের আইন বাস্তবায়ন করতে হবে

বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তৈরি পোশাকশিল্প হলো রপ্তানি খাতে সর্বাধিক আয়কারী এবং সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকারী খাত। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও প্রসারে পোশাক খাতের ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এই খাতকে এগিয়ে নিচ্ছে পোশাকশ্রমিকরা।

বলা বাহুল্য, তৈরি পোশাকশিল্পে বিপুলসংখ্যক নারীর অবদান এ খাতকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অথচ সেই নারী শ্রমিকরাই পান না যথাযথ মূল্যায়ন। তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ, কম মজুরি, অনিয়মিত বেতন-ভাতা, কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব, যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া, সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়া, অপর্যাপ্ত মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ নানা সমস্যা তাদের জীবনযাপনকে কঠিন করে তুলেছে। সেলাই ও অপারেটরের কাজ ছাড়া বড় কোনো পদে তাদের পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। কিছু গার্মেন্টে মাতৃত্বকালীন ছুটি দিলেও তা ছয় মাসের জায়গায় তিন মাস দেওয়া হয়। এ অবস্থায় খাতটিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়েও দেখা গেছে ব্যাপক অসন্তোষ। পোশাকশ্রমিকরা হচ্ছেন এ খাতের প্রধান চালিকাশক্তি। তাদের অখুশি রেখে, তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাদের সঙ্গে অন্যায় করে এ খাতে উন্নয়ন আশা করাটা বোকামি।

দেশে গৃহকর্ম ও সেবামূলক কাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে ভারসাম্য নেই। একজন নারীর ভালো থাকা ও নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এতে কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হওয়া অনেক নারী পোশাকশিল্প থেকে কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত নারীশ্রমিকরা প্রতিদিন প্রায় ৫ ঘণ্টা গৃহস্থালি ও যত্নমূলক কাজে ব্যয় করেন; যেখানে একজন পুরুষ শ্রমিক ব্যয় করেন ২ ঘণ্টা। এ হিসাবে পুরুষের চেয়ে ৩ ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করেন নারীরা। অন্যদিকে একজন পুরুষ নিজের জন্য প্রতিদিন গড়ে ১৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন, সেখানে একজন নারী সময় পান গড়ে ৯ ঘণ্টা। এ ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিদিন পুরুষের তুলনায় ৩ ঘণ্টা কম সময় নিজের জন্য ব্যয় করেন। কর্মক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হয়ে পোশাকশিল্প থেকে নারী সরে আসতে বাধ্য হন। রাজধানীর মিরপুরের চারটি তৈরি পোশাক কারখানার ১০০ জন নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মধ্যে চালানো একটি র‌্যাপিড কেয়ার অ্যানালাইসিস জরিপে এই অবস্থা উঠে এসেছে। গত শনিবার রাজধানীর মিরপুর-১১-এ বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি) ভবনে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন কর্মজীবী নারী আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় জরিপের এই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। মতবিনিময় সভায় বলা হয়, তৈরি পোশাক খাতের নারীশ্রমিকরা ঘরের কাজে বেশি সময় দিয়েও নিজের যত্ন নিতে সময় পান কম। পুরুষ সহকর্মীর তুলনায় একজন নারীশ্রমিককে প্রতিদিন ঘরকন্যার কাজে ৩ ঘণ্টা বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া পুরুষের তুলনায় নিজের যত্ন নিতে সময় পান কম তারা। এতে নারীশ্রমিকের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যসেবায় ঘাটতি পড়ে। ঘরের কাজ ও কর্মস্থলের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে নারীশ্রমিকরা পড়েন বিপাকে। এ কারণে অনেক নারীশ্রমিক কারখানার কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।

এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার পর নারীর কাজের চাপ বেড়ে গেছে। তাই নারীশ্রমিকের পক্ষে যে আইনগুলো আছে, সেগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন দরকার। কারখানায় সরকারের নজরদারি আরো শক্তিশালী করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close