বিলাল হোসেন মাহিনী

  ০৫ জুন, ২০২৩

মুক্তমত

পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করতে হবে

বৃক্ষরোপণে পিছিয়ে থাকলেও কর্তনে এগিয়ে আমরা। প্রশাসনের কাছে বৃক্ষরোপণের হিসাব থাকে কিন্তু বৃক্ষ নিধনের খবর থাকে না বা রাখেন না কেউ। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলেই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বেশ তৎপর হয়ে পড়েন। বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশসচেতনতার ব্যাপারে তখন খুব আন্তরিক দেখা যায় তাদের। এর ভেতরের রহস্য খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই আগ্রহের পেছনে রয়েছে টাকার খেলা। কিন্তু সেসব বৃক্ষ কত দিন বেঁচে থাকল তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকে না তাদের। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বৃক্ষরোপণ প্রজেক্টে মোটা অঙ্কের বাজেট আছে। এজন্য এ কাজে কর্মকর্তাদের তোড়জোড় দেখা যায়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে টাকার বরাদ্দ না থাকায় কর্মকর্তাদের সেখানে আগ্রহই থাকে না। একইভাবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করলেও তা রক্ষণাবেক্ষণে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

১৯৭৪ সাল থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে নানা ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়। সভ্যতা, নগরায়ণ, শিল্পায়নের নামে প্রকৃতিকে যেভাবে নিঃশেষ করা হচ্ছে তা দেখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চৈতালি’ কবিতার চরণটি মনে পড়ে যায়, তিনি বলেছিলেন, ‘দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর’। আমাদের প্রকৃতি কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়। প্রকৃতি শুধু আমার নয়, আমাদের। আমরা প্রকৃতির অংশ। প্রকৃতি আমাদের সবার। আসুন আমরা আমাদের প্রকৃতিকে রক্ষা করি, আমরা নিজেদের রক্ষা করি। কেননা, পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করা মানেই নিজেদের রক্ষা করা। আমরা গাছ লাগাই। গাছের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটু সবুজ অরণ্য রেখে যাই। বিশ্বকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে সাহায্য করি।

প্রতি বছর পরিবেশ দিবসকেন্দ্রিক নানা আলোচনা, উদ্যোগ, পরিকল্পনার পরও বনভূমি উজাড় কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। বনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে একের পর এক উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। অনেক বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কার মধ্যেই এগুলো করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বনভূমি এবং কৃষিজমি ধ্বংসের অনেক উদাহরণ রয়েছে। সরকার ও বিভিন্ন দপ্তর কর্তৃক পরিবেশ নষ্ট করে নানা স্থাপনা তৈরির অভিযোগও রয়েছে অনেক সংগঠন ও পরিবেশকর্মীর।

পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বনভূমি সৃজন কষ্টসাধ্য। বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বনাচ্ছাদন ১৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আশার কথা হলো, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ ভূমির ১৬ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে সারা দেশে ১ কোটি চারা বিতরণ ও রোপণ করা হয়েছিল। চারা রোপণের এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা দরকার।

অন্যদিকে নিরাশার কথা হলো- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত দেশের প্রায় তিন লাখ একর বনভূমি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে। এখন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গাছ কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ড্রেন, রাস্তা, ভবন নির্মাণসহ নানা স্থাপনা তৈরিতে নিধন হচ্ছে বৃক্ষ। শুধু তা-ই নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একইভাবে গাছ কাটার মহোৎসব চলছে। যশোরের অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নে কয়েক বছর ধরে চলছে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কারখানা। প্রশাসনের অভিযানে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর অদৃশ্য শক্তির ইশারায় আবারও চালু হয়ে যায় গাছ পুড়িয়ে কয়লা বানানোর তুঘলকী কাণ্ড। অপ্রয়োজনে বৃক্ষ নিধন বন্ধ হোক। সবুজে ভরে উঠুক দেশ।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close