reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ নভেম্বর, ২০২২

আদালত প্রাঙ্গণে উচ্চ নিরাপত্তা জরুরি

‘রাজধানীর রায়সাহেব বাজার মোড়সংলগ্ন ঢাকার সিজেএম আদালত ফটকের সামনে রবিবার দুপুর ১২টার একটু পরে হঠাৎ দেখা যায় আসামিদের হাতকড়ার সঙ্গে দড়ি ধরে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে কয়েকজন মিলে মারছে। এ সময় আশপাশ থেকে মুহূর্তেই আরো কয়েকজন এসে হামলা শুরু করে পুলিশের ওপর। ঘটনাটি দেখে পুলিশের কয়েকজন সদস্য এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়। পুলিশের ওপর হামলা ও চোখেমুখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।’ না, জনসম্মুখে ক্যামেরায় ধারণ করা কোনো সিনেমার দৃশ্য এটি নয়, বাস্তবেই ঘটেছে এমনটি। পুলিশকে মারধর করে এভাবেই ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে দুই জঙ্গিকে। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এ খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

পুলিশের কাছ থেকে আসামিদের ছিনিয়ে নেওয়া, তাণ্ডও আবার আদালত চত্বর থেকে, সত্যিই এ ঘটনা অনভিপ্রেত। এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ আসামি আসামিই। তাকে আদালতে আনা-নেওয়ার সময় সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবলয়ে রাখতে হবে। আর রবিবার যে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো তারা ছিল একটি স্পর্শকাতর মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত। তাদের ক্ষেত্রে বোধহয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাটা আরো জোরদার করা উচিত ছিল। এবারই যে এমন ঘটনা প্রথম ঘটল তা নয়। এর আগে ২০১৪ সালেও ময়মনসিংহের ত্রিশালে জেএমবির তিন সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। সেবার প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তিন জেএমবি সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল।

রবিবার ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম এবং মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তারা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তাদের ধরতে এরই মধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুলিশের পক্ষ থেকে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রবিবার বিকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। যদি কারো অবহেলা থাকে, গাফিলতি থাকে, তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিশ্চয়ই আমরা তদন্ত কমিটি করব, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, পুলিশ হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছে। শিগগিরই জঙ্গিদের ধরতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আমরা জানি, আসামি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাদের অপরাধের ধরনের ওপর নির্ভর করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এই আসামিদের ক্ষেত্রে কী নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছিল তা আমাদের জানা নেই। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে যথেষ্ট ছিল না তা জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা থেকে স্পষ্ট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যেও জঙ্গিরা বারবার মাথা চাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। রবিবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা তাদের সক্ষমতা নতুন করে জানান দিল। জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলা যায়। জঙ্গি দমনে সরকারের সফলতা প্রশংসনীয়। এর মধ্যে এমন ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিল। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close