হীরেন পণ্ডিত

  ২৩ মে, ২০২২

মুক্তমত

অদম্য সাহসের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। জুন মাসের শেষ সপ্তাহে উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। নামকরণ নিয়ে আলোচনার যেন শেষ নেই। তবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণ চান না। এটা তিনি আগেও বলেছেন। এটা তার বড় ও উদার মনের পরিচয় বহন করে। তার পরও একশ্রেণির মানুষ পদ্মা সেতুর নাম শেখ হাসিনার নামে রাখার আবদার করে চলেছেন। বলা হচ্ছে, সর্বস্তরের মানুষ শেখ হাসিনার নামে পদ্ম সেতুর নাম চাচ্ছে। কথায় আছে নামে নয়, কর্মেই পরিচয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কর্ম দিয়ে ইতোমধ্যেই তা প্রমাণ করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নাম এ দেশের মানুষের হৃদয়ে লেখা আছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।

এটা কেউ অস্বীকার করবে না এবং সবাই জানেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপেই এই পদ্মা সেতু স্বপ্ন থেকে আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। পদ্ম সেতু নিশ্চয়ই শেখ হাসিনার সাহসের ফসল। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিই তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও সাহসের ফসল। দেশের যে অদম্য অগ্রযাত্রা তার অধিনায়ক নিঃসন্দেহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব প্রতিকূলতার মধ্যেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয়ে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই কাউন্সিলের মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেন। ১৯৯৬ সালে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। শেখ হাসিনা সবচেয়ে দুঃসময়ে দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি গণতন্ত্রের সংগ্রামে অনেক সর্বদা লড়াই করেছেন। তিনি বারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে একটি জনপ্রিয় দল হিসেবে ক্ষমতায় এনেছেন এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করেছিলেন তা হলো বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার এবং পরে ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।

স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রের হাতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর কালো অন্ধকার গ্রাস করেছিল, সেই অন্ধকার তাড়াতে প্রথম আলোর মশাল জ্বালিয়েছিলেন তিনি। সে মশাল, প্রাথমিক সংকট- সীমাবদ্ধতার পর দিকে দিকে আলোকিত করতে থাকে, শুরু হয় রাহু মুক্তির পালা। সব আবর্জনা দূর করতে প্রভাতে যেমন বাঙালি একাকার হয়, প্রতিশ্রুতিতে সমৃদ্ধ হয়, তেমনি এক শুভ প্রতিশ্রুতির বাতাস বইতে দেখা যায় তার দেশে ফেরার দিন থেকে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাহসী কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরামহীনভাবে নিরন্তর জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অদম্য শক্তি, সাহস, মনোবল এবং দঢ় নেতৃত্বে বিশ্ব অবাক করে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হবে এবং ২০৪১ সালে একটি ‘উন্নত দেশ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২,৮২৪। অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কয়েকটি শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে একটি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টি মাইলফলক দিয়েছেন প্রথমটি হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ, যা এরই মধ্যে একটি পর্যায়ে এসেছে, দ্বিতীয়টি ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন করা, তৃতীয়টি ২০৪১ সালে একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার এবং চতুর্থটি ২১০০ সালের ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন। এই চার দশকে তিনি গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য লড়াই করেছেন। সংগ্রামের এই গতিপথ ছিল প্রতিকূল। শেখ হাসিনা, যিনি অলৌকিকভাবে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাওয়ার জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মহেশখালী-মাতারবাড়ী সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পসহ বেশ কটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক এবং আইটি গ্রাম নির্মিত হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আধুনিক প্রযুক্তি সবকিছুর অপূর্ব সমন্বয় ঘটাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা, চিন্তাভাবনা করতে হবে। বাংলাদেশকে আমূল বদলে যাচ্ছে টেকসই উন্নয়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এে শে। দুর্বল, অনুন্নত, নড়বড়ে অবস্থা থেকে শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। প্রচলিত অবকাঠামোর আধুনিক রূপান্তর সম্ভাবনার নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে প্রতিদিন। যেসব খাত কিংবা ব্যবসা আগে অবহেলিত অবস্থায় ধুঁকে ধুঁকে চলছিল সেগুলোতে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষ কোনোভাবেই অক্ষম, দুর্বল, মেধাহীন নয়। তারা অনেক পরিশ্রম করতে পারে। বিভিন শ্রেণি-পেশার নারী-পুরুষ যারা এর আগে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, আর অসহায়ত্বের বেড়াজালে নিজেদের বন্দি করে রেখেছিল, তারা এখন নিজের মেধা, বুদ্ধিমত্তা, শক্তি, সাহস, পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে সম্ভাবনার নতুন নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন। উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেই নিজের ভাগ্য নতুনভাবে গড়ে তুলছেন। এভাবে সবার সম্মিলিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকা, জনপদের চিত্র। সম্ভাবনার উজ্জ্বল চমক দ্যুতি ছড়াচ্ছে দেশজুড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন অবিশ্বাস্য রকমের। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৪১তম স্থানে উঠে এসেছে।

অতিভক্তি ভালো না। শেখ হাসিনাকে যারা ভালোবাসেন তারা কেন একটি স্থাপনার নামের মধ্যে তাকে সীমিত করতে চান। শেখ হাসিনা এখনো দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যত দিন বেঁচে থাকবেন মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। তার সামনে আরো অনেক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে মানুষের জন্য আরো বৃহত্তর কল্যাণের পথ প্রশস্ত করার। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশার ইতি ঘটেনি। তাই তাকে তার মতো চলতে দিন। তার নামে পদ্ম সেতুর নামকরণ করে তাকে প্রশংসিত না করে সমালোচনার মুখেই ঠেলতে চাইছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিজের নামে পদ্মা সেতুর নাম চান না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তি না ছড়ানোর চেষ্টা করছেন অনেকে, হঠাৎ কেউ কেউ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের তারিখ বলে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে চূড়ান্ত তারিখ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণতন্ত্রকে সুসংগঠিত করতে বাংলার পথ-প্রান্তর চষে বেড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। গত ৫০ বছরে সবচেয়ে সৎ রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। তিনি না ফিরলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতো না। জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান হয়েছে। নয়তো অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়া সম্ভব হতো না। তিনি না থাকলে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু হতো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে পাথর বিছানো পথ তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষের সবচেয়ে বড় উপহার পদ্মা সেতু। এটি শুধু পদ্মা পারাপারের সেতুই নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মবিশ্বাস এমন উচ্চতায় প্রতিষ্ঠা করেছে যে, আমরা যেকোনো অসাধ্য সাধন করতে পারি। আর এই আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলেছেন আমাদের সময়ের সাহসী প্রধানমন্ত্রী। পিতা দিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা আর কন্যা দিলেন সমৃদ্ধি, ঘর বারান্দা চলাচলের পথ সাজিয়ে দিচ্ছেন। গ্রাম পাচ্ছে নাগরিক জীবন।

এই পদ্মা সেতু যাতে না হতে পারে তার জন্য অনেকেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করেছেন। বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে গোটা জাতিকে হতাশায় ফেলে দেয়। কিন্তু সমগ্র জাতিকে অবাক করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করবেন। তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই আমাদের বঙ্গবন্ধুকন্যা। বাংলাদেশে যখন সংকট তীব্র হয়, যখন সবকিছু আবর্তিত হয় অনিশ্চয়তায়, বাংলার আকাশে কালো মেঘ জমে থাকে, তখন শেখ হাসিনাই আমাদের শেষ ভরসাস্থল হয়ে দাঁড়ান। একজন ব্যক্তি অদম্য সংকল্প এবং কঠোর নিষ্ঠার সঙ্গে ভয়ের কালো মেঘকে সরিয়ে দেন, দেশের মানুষ আশার আলো দেখে। যখনই মনে হয় যে সবকিছু শেষ হয়ে আসছে, তখন আমরা খারাপ সময়টির মুখোমুখি হই, তবেই একজন ত্রাণকর্তাই দক্ষতার সঙ্গে খারাপ দুঃস্বপ্নটি সরিয়ে ফেলেন- তিনিই আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তার পরিচয় প্রধানমন্ত্রী বা রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি তিনি এক অদম্য সাহসী মানুষ।

তিনি সাহসিকতার সঙ্গেই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলা করছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তার সাহসকে আরো অদম্য করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই অদম্য সাহসের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close