বেপরোয়া পরিবহন
সমাজটা ক্রমশই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। একটি অহংবোধ যেন আমাদের শিরা-উপশিরায় ক্ষতিকর ভাইরাসের মতো ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। যেখান থেকে বেরিয়ে আসা কোনোভাবেই যেন সম্ভব হয়ে উঠছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমাদের অর্থনীতির চরিত্রই আজ সমাজের চরিত্রকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা, জীবনের নিরাপত্তায় অস্থিরতা, শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা। কোথায় অস্থিরতা নেই! এসব অস্থিরতার মাঝে বাসচালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনাও সাধারণ মানুষের ভাবনায় এক নতুন অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনের প্রতি গাড়ি চালকদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ না থাকায় কেউ আর আইন মানছেন না। অনেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছেন। অনেক সময় চালকের পরিবর্তে চালকের আসনে বসছেন হেলপার।
আমাদের জাতীয় পুঁজির চরিত্র সবসময়ই এ দেশের মাটি ও মননের ভালোবাসার নির্যাসে বেড়ে ওঠার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বঞ্চিত হতে হতে লুটেরা পুঁজির দৌরাত্ম্যের কাছে পরাভূত হয়েছে। সে কারণেই লুটেরা পুঁজির চরিত্র আজ গ্রাস করেছে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি; যার বহিঃপ্রকাশ সমাজের এই অস্থিরতা। যে অস্থিরতার কারণে পুড়ছে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষ। ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের মতে, পরিবহন খাতে চালকদের নিয়ম-নীতির মধ্যে আনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে, যা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য পরিবহন মালিক, শ্রমিকদের পাশাপাশি যাত্রীদের সচেতন হতে হবে। এই সচেনতা বলতে প্রকৃত অর্থে ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ কী বোঝাতে চেয়েছেন তা পরিষ্কার নয়। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুর হার ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। বিশ্লেষকরা বলছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনাই দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে সব কিছুতেই বেপরোয়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো। অন্যান্য সব ক্ষেত্রের মতো এখানেও তার প্রতিফলন ঘটছে। একে রোখার জন্য এখন শুধু একটিমাত্র পথই খোলা আছে। আর সে পথটি হচ্ছে, আইনের কঠোরতম বাস্তবায়ন।
একদিনে বা রাতারাতি পুঁজির চরিত্রকে পরিবর্তন করে লুটেরা পুঁজির চরিত্র থেকে জাতীয় পুঁজির চরিত্রে উল্লম্ফন সম্ভব নয়। সুতরাং, একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করার কথা বলেছেন বিজ্ঞজনরা। একইসঙ্গে তারা আরো বলেছেন, আইনের কঠোর বাস্তবায়নের কথা। আমরা মনে করি, সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবে।
"