কাব্য সাহা

  ০৪ ডিসেম্বর, ২০২২

স্মৃতির পাতায় স্টাডি ট্যুরের কথামৃত

স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং ফার্মেসি বিভাগের বিদায়ি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে ফার্মেসি বিভাগ কর্তৃক প্রতিবারের মতো এবারও শিক্ষাসফরের আয়োজন করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই ধারা বজায় রেখে শিক্ষাসফরের স্থান ঠিক করা হয় দেশের গ-ি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শিমলা-কুল্লু-মানালিতে। এবারের বিদায়ি ব্যাচ ‘আরক্তিম ৩৪’।

১ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ থেকে কলকাতার উদ্দেশে গাড়ি ছেড়ে যায়। শিক্ষাসফরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সফর সঙ্গী ছিলেন তিনজন শিক্ষক, অভিভাবক এবং ঘুরিং-ফিরিং টিম। যাত্রার শুরুতে বাসের মধ্যেই শুরু হয় আমাদের নাচণ্ডগানের আসর। তনয় সাহা স্যার, মিরাজুল ইসলাম স্যার, সাইমন শাহরিয়ার স্যারসহ সবাই যেন অবাচনিক যোগাযোগের মাধ্যমে এটাই বোঝালেন বাসের মধ্যে আমাদের নাচণ্ডগান আর উল্লাসে তাদের সমস্যা হচ্ছে না বরং অভিভাবকসহ সবাই উপভোগ করেছেন আমাদের আনন্দ।

ভোরে পৌঁছে যাই বেনাপোল সীমান্তে। সূয্যিমামা ওঠার কিছু সময়ের মধ্যেই ইমিগ্রেশন শেষ করে ভারতের সীমান্তে পৌঁছে যাই। এবার গন্তব্য হোটেলের উদ্দেশে। সবাই ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ শেষ করেই রাতের ট্রেন ধরার প্রস্তুতি নিতে থাকে। সন্ধ্যা নাগাদ পৌঁছে যাই হাওড়া স্টেশনে। সবাই ট্রেন জার্নির জন্য শুকনা খাবার কিনে নেয় কারণ দীর্ঘ প্রায় ৩২ ঘণ্টার জার্নি। সবাই প্ল্যাটফর্মে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে ব্যাগ-লাগেজ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ট্রেনে ওঠে পড়ে। দীর্ঘ সময় ট্রেন জার্নিটাই সবার অসাধারণ লাগছিল। বাসের মতো ট্রেনেও জমে যায় একের পর এক গান ও হাসি-ঠাট্টার আসর। উদ্দেশ্য শিমলার পথে। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছাতেই সবাই নেমে পড়ল। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আমরা প্রবেশ করেছি হিমাচল প্রদেশে। একের পর এক পাহাড় আর সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলো আমাদের যেন মুগ্ধ করেই চলেছে। যতই সামনের দিকে আগাচ্ছিলাম ততই নতুন নিদর্শনে সবাই আকৃষ্ট হচ্ছিলাম। সবাই যার যার মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে, ভিডিও করতে ব্যস্ত। সঙ্গে চলছে নানা বাহারি গান। সবকিছু যেন জমে যাচ্ছে।

শিমলা পৌঁছে সকালের নাশতা শেষ করে হোটেলে সবাই ফ্রেশ হয়ে নিচ্ছিল। এরপর কিছুটা বিশ্রাম নিয়েই লাঞ্চ শেষ করে সবাই শিমলার বিখ্যাত মল রোডের উদ্দেশে ঘুরতে বের হয়েছিল। ঠান্ডায় একদিকে আমাদের কাঁপাচ্ছিল অন্যদিকে শিমলার প্রতিটি রাস্তা, নিদর্শন যেন মনের চাওয়াগুলো পূরণ করছিল। সবাই মন্দির ও বিভিন্ন নিদর্শনে ছবি তুলে স্মৃতিগুলো ধরে রাখতে ব্যস্ত। মল রোডের পানিপুরি, ঝালমুড়ি, রং চা শীতে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিল। অনেকে এর মাঝেই কেনাকাটা সেড়ে নিয়েছেন। পরের দিন শিমলার ফাগু, কুফরিতে সবাই নানা রকম ট্রেকিংয়ে মেতে ওঠে। ভালোই কেটেছে শিমলার মুহূর্তগুলো।

পরের দিন খুব ভোরে যাত্রা শুরু হয় কুল্লু-মানালির উদ্দেশে। কুল্লুতে পৌঁছেই সবাই প্রস্তুত রিভার রাফটিংয়ের জন্য। যে কথা সে কাজ, গ্রুপ করে নেমে পড়ল সবাই ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঠান্ডা বরফ পানিতে। এরপর শাল ফ্যাক্টরি ভ্রমণ শেষে সবাই

মানালিতে হোটেলে পৌঁছায়। মানালিতে পৌঁছাতেই সবার চোখ বরফ পাহাড়ের দিকে। রাতে নৈশভোজ শেষ করে প্রস্তুতি নিচ্ছে মানালির রোথাং পাসে যাত্রার জন্য।

খুব সকালেই বেরিয়ে পড়লাম সবাই। উদ্দেশ্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩০৫০ ফিট উঁচুতে উঠতে হবে। দীর্ঘপথ পারি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত সেই বরফের ছোঁয়ায় আমরা। মানালির রোথাং পাস পৌঁছাতেই সবাই যেন স্বপ্ন বাস্তবায়নে একের পর এক ধাপ অতিক্রম করেছে বলে মনে হলো। গাড়ি থেকে নেমেই সবাই বরফে মিশে গিয়েছিল। নানা রকম ট্রেকিং, হইহুল্লোড় যেন নতুন স্মৃতি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সবাই ছবি-ভিডিও করে প্রতিটি মুহূর্ত যেন বন্দি করে নিচ্ছে। ভাগ্য সবার সহায় হলো, হঠাৎ করেই তুষারপাত হতে শুরু করল। যা ১৬ আনায় পরিপূর্ণ। এরপর মানালির বিখ্যাত হিড়িম্বা টেম্পল, মল রোডে শপিং শেষে পুনরায় কলকাতা ফেরার প্রস্তুতি। এরপর আবার ট্রেন জার্নি এবং কলকাতা শহরের কিছু অংশ ঘুরে সবাই শপিং করতে নিউমার্কেটে চলে যায়। সবশেষে এবার দেশে ফিরে ফেরার পালা।

১২ দিনের লম্বা জার্নি শেষ করে আমরা সবাই দেশে ফিরে আসি। এই ১২ দিনে তৈরি হয়েছিল কত না সুন্দর মুহূর্ত। সবাই মিলে একটা পরিবারে রূপ নিয়েছিল। একে অন্যের প্রতি যত্নশীল থাকা, একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার করতে যাওয়া, একটা যৌথ পরিবারের মতো সব সৌন্দর্য একসঙ্গে উপভোগ করা, এসব কিছুই ছিল শিক্ষাসফরের বিশেষত্ব। তবে ট্যুরে সবচেয়ে বেশি মনে পড়েছে যেসব বন্ধুরা নানা জটিলতার কারণে ট্যুরে যেতে পারেনি তাদের কথা। তবুও সবটা মানিয়ে নিয়ে এই ১২ দিন আমাদের সবার স্মৃতির পাতায় রঙিন হয়ে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close