গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ১৮ জানুয়ারি, ২০২২

সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল

স্বল্পব্যয়ে সর্বোচ্চ সেবা

সিরাজগঞ্জের যমুনা বিধৌত চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর থানার হিংস্র যমুনার অনতি দূরে এবং উপমহাদেশের প্রখ্যাত আউলিয়া খাজা ইউনুস আলী (রহ.) এর পবিত্র মাজার সংলগ্ন স্থানে গড়ে উঠেছে খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। ১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও প্রখ্যাত আউলিয়ার নাম অনুসারেই এই মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল ২০০৪ সালে ১৭ মে উদ্বোধন করেন তার কন্যার জামাতা ডাক্তার মীর মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন (প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারমান)।

২০০৫ সালে মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বর্তমানে শিক্ষার্থী ৫৩৫ (এমবিবিএস) জন। এদের মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীও রয়েছে। তা ছাড়া ডেন্টাল বিভাগে রয়েছে ৫২ জন শিক্ষার্থী। ২০১২ সালে খাজা ইউনুস আলী ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৪০০ জন।

উল্লেখ্য নার্সি ডিল্পোমা কলেজ, ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ এই হাসপাতাল চত্বরেই প্রতিষ্ঠিত। মেডিকেলে মেধাবী পাঁচজন শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ ফ্রি এবং মুক্তিযোদ্ধা কোঠা দুজনকে ফ্রি শিক্ষা দেওয়া হয় বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়াও প্রতি বছর শিক্ষাবিষয়ক ভ্রমণে শিক্ষার্থীদের বিদেশে পাঠানো হয়।

সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগী আছিয়া বেগম ও ওমর ফারুক জানান, আমরা আজ কয়েকদিন ধরে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। এ হাসপাতালে কর্তব্যরত ডাক্তারদের সুচিকিৎসায় আমরা অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনো অনিময় আমাদের চোখে পড়েনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তারা আরো বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। হাসপাতালে অধিক খরচ নেওয়া হয় এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। হাসপাতাল এবং চিকিৎসারত রোগীর মঙ্গল চায় না বলেই একটি কুচক্রি মহল এই মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।

এখানে অধ্যয়নরত ছাত্র আবির রহমান জানান, কলেজের পরিবেশ এবং পাঠদান অন্যান্য কলেজের চেয়ে ভিন্ন। আমরা এই কলেজে সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে পড়াশোনা করছি।

এই হাসপাতালের চিকিৎসা সমর্কে জানতে চাইলে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ আবদুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার কারণে যমুনা বিধৌত এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবায় নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। আন্তজার্তিকমানের এই হাসপাতালটিতে প্রায় সব ধরনের চিকিৎসাসেবা রয়েছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসক, দক্ষ নার্স এবং সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক ব্যবস্থার কারণে রোগীরা হয়রানিবিহীন চিকিৎসা পাচ্ছে। চিকিৎসার ব্যয় ভারও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা, গরিব ও দুস্থ রোগীদের জন্য বিশেষ চিকিৎসাসেবা আছে বলেও তিনি জানান।

হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান, ট্রান্সমিশন মেডিসিন বিভাগ এবং প্রশাসক ডা. মো. শহিদুল ইসলাম জানান, প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এই হাসপাতাল। ১৩৮ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা ৬০০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে আউট ডোরে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার রোগীর চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। দরিদ্র রোগীদের জন্য ১৫ শতাংশ বেড সম্পূর্ণ ফ্রি। হাসপাতাল ফাউন্ডেশন থেকে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, মেডিসিন থেকে শুরু করে ক্যানসার, হার্ড অপারেশন, কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারিসহ ২৪টি বিভাগে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।

খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ জানান, রোগীকে স্বল্প ব্যয়ে সর্বোৎকৃষ্ট সেবা প্রদানই আমাদের লক্ষ্য। একমাত্র আমাদের হাসপাতালেই ওষুধের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য বায়ু ইকু ভ্যালেন্স ল্যাব আছে। যা বাংলাদেশে অন্য কোথাও নেই। ফলে বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয় হয়। বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে শুধু এই হাসপাতালে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কোর্স এমডি, এমফিল, চালু আছে। এখানে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতি বছর বিদেশ থেকে ডাক্তার এসে স্থানীয় ডাক্তারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথাও জানান তিনি।

ভয়াল যমুনার করাল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত এই প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েদের উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে এখানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে চাকরি প্রদান করা হয়েছে। এসব মেয়েরা আজ আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী। চাকরির পাশাপাশি সুখে-শান্তিতে ঘর-সংসার করছে অনেকেই। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি মানবসেবা করা প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য বলে এলাকার সচেতন মহল জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close