প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৯ মার্চ, ২০২৪

সোমালি জলদস্যুদের দলে শিশু-কিশোররা

আরেক বাংলাদেশি জাহাজ এমভি জাহান মনি ১৪ বছর আগে যখন সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল, সেটিতে জিম্মি নাবিকদের যারা পাহারা দিতেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ১৬-১৮ বছর বয়সি সশস্ত্র কিশোররা। দীর্ঘ এ সময় পরও সাগরে দস্যুতার কাজে অল্প বয়সিদের যুক্ত থাকার প্রবণতা কমেনি।

সবশেষ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে আটকের সময় সোমালি জলদস্যুদের ব্যবহার করা আরেক জাহাজ এমভি রুয়েনের জলদস্যুদের মধ্যেও রয়েছেন শিশু-কিশোররা। ভারতীয় নৌবাহিনীর ৪০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে উদ্ধার এমভি রুয়েনে আটক ৩৫ সোমালি জলদস্যুদের এক চতুর্থাংশ অপ্রাপ্তবয়স্ক। সাগরে গ্রেপ্তারের পর তাদের ভারতের একটি আদালতে তোলা হলে জানা যায় এ তথ্য।

এতে করে সোমালিয়া উপকূলে ‘সমুদ্রপথের আতঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত সশস্ত্র জলদস্যুদের দলগুলোতে শিশু-কিশোরদের থাকার বিষয়টি আবারও সামনে আসে। এর আগেও বিভিন্ন সময় জাহাজ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ধরা পড়াদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের দস্যুতায় জড়িত থাকার এমন তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

মাল্টার পতাকাবাহী এমভি রুয়েন থেকে গ্রেপ্তার জলদস্যুদের রোববার ভারতের আদালতে হাজির করা হলে তাদের মধ্যে আটজনের দাবি তাদের বয়স ১৮ বছরের কম। এমন সংবাদ দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। শুধু এখন নয়, বছরের পর বছর ধরে সোমালি জলদস্যুদের দলগুলোতে শিশু-কিশোরদের থাকার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক সভার প্রতিবেদনেও বলা হয়- জাতিসংঘের চিলড্রেন অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট বিষয়ক দূত মুক্তিপণের জন্য জাহাজ জিম্মি করার কাজে শিশুদের ব্যবহার বাড়ার কথা বলেছিলেন।

শিশুরা কেন : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্ব রাজনীতি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম দ্যা জিওপলিটিক্স এ ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে, জার্মানিতে বিচারের মুখোমুখি হওয়া ১৮ বছর বয়সী এক সোমালি জলদস্যুর তথ্য প্রকাশ করা হয়। মো. ইউসুফ নামে জলদস্যু দলের ওই সদস্য বলেন, দস্যুতার কাজে যোগ দেয়ার আগে তিনি নৈশ প্রহরীর চাকরি করে দিনে বড়জোড় ২-৩ ডলার আয় করতেন। পরে তাকে একটি জাহাজের ‘পাইলট’ পদে চাকরির জন্য ৫০০ ডলার বেতনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর যখন ইউসুফ বুঝতে পারেন যে তাকে একটি জার্মান বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনিয়ে নেওয়ার কাজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তার আর ফেরার সুযোগ ছিল না।

দ্যা জিওপলিটিকস ওই প্রতিবেদন বলছে, জলদস্যুতার প্রবণতা বাড়ায় অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণগুলো হলো- সোমালিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চমাত্রার দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বারবার ঘটতে থাকা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সোমালিয়ায় বছরে মাথাপিছু গড় আয় ৬০০ ডলারের মতো। অথচ জলদস্যুরা শুধু একটি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনায় হাজার হাজার ডলার পেতে পারে।

ওই প্রতিবেদন অনুসারে, জলদস্যু দলের প্রধানরা শিশুদের প্রস্তাব দেয়। বিশেষ করে ১১-১৭ বছর বয়সী শিশুদের এ কাজে প্রলুব্ধ করে। স্বাক্ষরতার হার কম হওয়ায় ‘সহজে’ অর্থ উপার্জনের পথ হিসেবে শিশুরা এ কাজে আগ্রহীও হয়।

দ্যা মেরিটাইম এক্সিকিউটিভ এর ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, শিশুদের জলদস্যুতার কাজে ব্যবহারের আরও কিছু কারণ তুলে ধরা হয়। যেমন-শিশু ও কিশোররা চটপটে হওয়ায় দ্রুত চলাচল করে, মই বেয়ে উঠতে পারে এবং তুলনামূলক ছোট জায়গার মধ্যে দিয়েও চলে যেতে পারে; যা প্রাপ্তবয়স্করা পারে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close