প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রাশিয়া

একদিনে গ্রেপ্তার ১৩০০ * দেশ ছাড়ছেন অনেকেই * সীমান্ত বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা

ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে নতুন করে সেনা পাঠানোর বিরোধিতায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে রুশ নাগরিকরা। এ ঘটনার পর সেখান ১ হাজার তিনশ নাগরিককে গ্রেফতার করেছে রাশিয়ান পুলিশ। রাশিয়ান হিউম্যান রাইটস গ্রুপ ওভিডি-ইনফো জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের সংখ্যা ১ হাজার তিনশরও বেশি। মস্কো এবং সেন্ট পিটার্সবার্গে বিক্ষোভের সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়, যা একদিনে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। খবর বিবিসি।

এর আগে স্থানীয় সময় বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ‘আংশিক সেনা সমাবেশের’ ঘোষণা দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া এ ধরনের সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে। এই আংশিক সেনা সমাবেশে ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকেও ডাকা হবে।

একই সঙ্গে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জয় পেতে আরও সেনা পাঠাতে চান বলে ঘোষণা দেন তিনি। এসময় তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা যদি হুমকির মধ্যে পড়ে, রাশিয়া এবং এর জনগণকে রক্ষা করার জন্য আমরা সবরকমের পদক্ষেপ নেবো।

তিনি আরও বলেন, যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চায়, তাদের জানা উচিত যে, পাল্টা বাতাস তাদের দিকেও যেতে পারে। পশ্চিমা দেশগুলো প্রমাণ করেছে যে, তারা চায় না রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি বজায় থাকুক।

এমন সময়ে পুতিন এ ভাষণটি দিলেন, যখন মস্কো পূর্ব এবং দক্ষিণ ইউক্রেনে রাশিয়ার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বিরাট অঞ্চলে মস্কো অনুগত নেতারা গণভোটের ডাক দিয়েছে। ওই গণভোট ডাকার পরদিনই তিনি রিজার্ভ সেনাদের ডাকার নির্দেশ দিলেন। এমন ঘোষণার পরেই রাশিয়ায় প্রায় ডজনেরও বেশি শহরে বিক্ষোভে নেমেছেন যুদ্ধবিরোধীরা।

দেশ ছাড়ছেন রুশ নাগরিকদের অনেকেই : অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে রিজার্ভ ফোর্সের তিন লাখ সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেয়ার পরপরই দেশ ছাড়ছেন অনেক রুশ নাগরিক। সীমান্ত বন্ধ হওয়ার শঙ্কায় আগেভাগেই দেশ ছাড়ছেন তারা। সরকার যুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে পারে এই আতঙ্কেই মূলত দেশ ছাড়ছেন অনেকে।

সম্প্রতি জানানো হয়েছে, ইউক্রেনে আরও ৩ লাখ সেনা মোতায়েন করবে পুতিন। অনেকের আশঙ্কা, রুশ প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তের পর যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে দেশটির সীমান্ত। আগ্রাসন অব্যাহত রাখতে পুতিন সরকার তরুণদের যুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে পারে, এই ভেবেও আতঙ্কিত অনেকে।

বিপুল সংখ্যক সাধারণ রুশ নাগরিক এ যুদ্ধ চায় না। তবে পুতিন সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলার সাহস নেই তাদের। তাই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন তারা। ইউলিয়া নামে এক রুশ নাগরিক বলছেন, এখনও আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার দেশ যুদ্ধ করছে। কেন এই যুদ্ধ তাও আমি জানি না। আমি এই যে গণমাধ্যমে কথা বলছি সেটা নিয়েও ভয় পাচ্ছি। আমার দেশের সরকার এবং পুলিশ এই ভিডিও দেখবে। এতে আমি সমস্যায় পড়তে পারি। আমি ইউক্রেনের স্বাধীনতা চাই। দয়া করে কেউ পুতিনকে থামান।

অন্য এক রুশ নাগরিক বলছেন, পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মনে হয়েছে এটা করা দরকার। আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি পুতিনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্যও করতে পারি না। প্রেসিডেন্ট এটি বলেছেন তার মানে আমাদের মেনে নিতে হবে, এটিই ঠিক।

যারা দেশ ছাড়ছেন তাদের অনেকের গন্তব্য সার্বিয়া। দেশটিতে যেতে রুশদের ভিসার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া রাশিয়ার ওপর সার্বিয়ার কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। তাই মস্কো-বেলগ্রেড রুটে এয়ার সার্বিয়ার ফ্লাইটের আগামী কয়েকদিনের সব টিকিটই বিক্রি হয়ে গেছে।

ইউক্রেনে পুতিন আগ্রাসন শুরু করার পরই অবশ্য অনেকে সার্বিয়া পাড়ি জমিয়েছেন। গত সাত মাসে অন্তত ৫০ হাজার রুশ নাগরিক এ দেশটিতে বসবাস শুরু করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close