প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মিয়ানমারে ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সংকট

* রাজধানী নেপিডোতে কারফিউ, ৫ কিংবা তার চেয়ে বেশি লোকের একসঙ্গে চলায় নিষেধাজ্ঞা * পিপলস ডিফেন্স ফোর্স রাজধানীতে আঘাত হানতে পারে আশঙ্কা * সামরিক হেলিকপ্টার থেকে স্কুলে সেনাদের নির্বিচার গুলি, নিহত ১৭

প্রতিবেশী মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। সর্বশেষ দেশটির ক্ষমতায় থাকা জান্তা সরকার রাজধানী নেপিডোতে কারফিউ জারি করেছে। সরকারি ঘোষণা অনুসারে এখন থেকে ৫ কিংবা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক লোক একসঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে না।

এদিকে মিয়ানমারে একদল সৈনিক সামরিক হেলিকপ্টার থেকে একটি স্কুলে নির্বিচার গুলিবর্ষণ করেছে। এতে সাত শিশুসহ কমপক্ষে ১৩ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছেন। সৈন্যরা ২০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে আটক করেছে।

মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানী নেপিডোর আটটি এলাকার প্রত্যেকটিতেই এই কারফিউ জারি করা হয়েছে। জান্তাবাহিনী নিযুক্ত এসব এলাকার প্রশাসকরা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, স্থানীয় কিছু জনগণ জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করায় এই কারফিউ জারি করা হয়।

এই কারফিউ এমন একসময়ে এলো যখন, জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের সশস্ত্র শাখা পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের গোলন্দাজ শাখা রাজধানী নেপিডোর পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকেই আঘাত হানা সক্ষমতা দেখিয়েছে। পিপলস ডিফেন্স ফোর্স রাজধানীতে আঘাত হানতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই এই কারফিউ জারি করা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা অনেকের।

জান্তাবাহিনী আরোপিত এই কারফিউ অনুসারে রাজধানীর বাসিন্দারা মধ্যরাত থেকে রাত চারটার মধ্যে তাদের বাড়ি থেকে বের হতে পারবেন না। একই সঙ্গে, রাজধানীতে সব ধরনের মিছিল এবং সভা-সমাবেশ-বক্তৃতা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী মনোভাব তীব্র হয়েছে। সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশটির সশস্ত্র বাহিনী বা তাৎমাদাও নিয়মিতই বিদ্রোহীদের আক্রমণ এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার থেকে ওই স্কুলে গুলিবর্ষণ করা হয়। সে সময় স্কুলটিতে ক্লাস চলছিল। ওপর থেকে নির্বিচার গুলিবর্ষণে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় অন্তত ৪ শিক্ষার্থী। আহত হয় বেশ কয়েকজন। আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার হয়। সেখানে মারা যান আরো দুজন।

ওই গ্রামের দুই বাসিন্দা জানান, সৈন্যরা ‘সন্ত্রাসীদের’ খুঁজতে গ্রামেও তল্লাশি চালিয়েছে। সৈনিকদের এই হামলা ও তল্লাশি অভিযানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অনেকেই। সেসব ছবিতে ওই স্কুলের বিভিন্ন স্থানে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে। ছবিতে স্কুলের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্নও দেখা যায়।

এ বিষয়ে সোমবার এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, সামরিক শাসনবিরোধী সশস্ত্র গেরিলা গোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি (কিয়া) ও পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (পিডিএফ) সদস্যরা দেশের মধ্যাঞ্চলীয় প্রদেশ সাগাইংয়ে লেত ইয়েত কোং গ্রামে ওই স্কুলটিতে আশ্রয় নিয়েছে- এই তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে।

সামরিক বাহিনী বিবৃতিতে আরো বলেছে, বিদ্রোহীরা ওই গ্রামটিকে তাদের অস্ত্র বহনের রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। বিদ্রোহীরা স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছে- গোপন সূত্রে এই তথ্য জানার সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় সেনা সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় কিয়া ও পিডিএফ সদস্যরা। তখন আত্মরক্ষার্থেই সেনাবাহিনীকে গুলিবর্ষণ করতে হয়েছে। সন্ত্রাসীরা গ্রামের মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার কারণে হতাহতের এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযানে ওই স্কুল ভবন ও গ্রামের বিভিন্ন বাড়ি থেকে হাতে বানানো ১৬টি বোমা উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে, মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসনবিরোধী ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) এক বিৃবতিতে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখতে নিরীহ বেসামরিক লোকজনের ওপর হত্যা-নিপীড়ণ চালাচ্ছে সামরিক প্রশাসক। আটক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close