প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৪ আগস্ট, ২০২২

জাওয়াহিরির মৃত্যু হলেও স্ত্রী, কন্যা অক্ষত যেভাবে

অন্যান্য দিনের মতো গত ৩১ জুলাইও সূর্যোদয়ের ঘণ্টাখানেক পর কাবুলের শহরতলির বাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়ান দীর্ঘদিন ধরে আল-কায়েদাকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া আয়মান আল-জাওয়াহিরি।

ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মিসরীয় এ জিহাদি যে ফজরের নামাজের পর বারান্দায় যেতে পছন্দ করতেন তার খবর আগেই মিলেছিল। কালও হলো সেটিই।

বিবিসি জানিয়েছে, রবিবার মৃত্যুর আগে সর্বশেষ তিনি ওই বারান্দাতেই যেতে পেরেছিলেন; যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৮ মিনিটের দিকে বারান্দাতে আঘাত হানলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল-কায়েদার ৭১ বছর বয়সি শীর্ষ নেতা। অথচ ঘরের ভেতরে থাকা তার স্ত্রী ও কন্যা থেকে যান অক্ষত।

ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনাও ছবিতে মনে হচ্ছে, ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ক্ষতি যা করার তা কেবল ওই বারান্দারই করেছে।

কীভাবে এত নিখুঁত হামলা করা গেল? : অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রায়ই লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে, কখনো কখনো ভুল টার্গেটে মেরে বিপুল বেসামরিক হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কিন্তু এবার ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন আর জাওয়াহিরির দৈনন্দিন অভ্যাস নিয়ে নিবিড় অধ্যয়নের পর হামলা হয়েছে। জাওয়াহিরি মারা গেছে, আর কারো কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এই সফলতা ভবিষ্যতে এমন হামলার সম্ভাবনাও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

লেজারের কেরামতি : নিখুঁত হামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র বেছে নেওয়া। জাওয়াহিরিকে হত্যায় ড্রোন থেকে ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।

এই ‘হেলফায়ার’ আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য; ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার হামলার পর এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের নিয়মিত ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে।

হেলিকপ্টার, স্থলে চলা যান, জাহাজ, বিমান, মনুষ্যবিহীন ড্রোনসহ নানা প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যায়।

কাবুলে জাওয়াহিরির ওপর হামলা চালানোর আগে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তার কিছু কিছু সবেমাত্র প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।

আল-কায়েদা নেতার ওপর হামলার পর মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, নিয়মিত বারান্দায় যাওয়ার অভ্যাস ছাড়াও ঘরের ভেতর জাওয়াহিরির জীবনচক্র বিষয়ে তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল।

এতেই বোঝা যায়, মার্কিন কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির বাড়ির ওপর কয়েক মাস না হলেও অন্তত কয়েক সপ্তাহ ধরে নজর রেখেছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হামলার আগে নানামাত্রিক পদ্ধতিতে তথ্য নেওয়া হয়েছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। নিচে থেকে ধারণা পাওয়া যায় না এমন দূরত্ব থেকে মার্কিন ড্রোন বা এয়ারক্রাফটগুলোও কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে হামলার স্থানটির ওপর নজর রেখেছে বলে অনেকের অনুমান।

এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আল-কায়েদা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের খোঁজ বের করতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কয়েক দশকের অভিজ্ঞতাও।

তবে এর আগে এই ধরনের অনেক হামলাই পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়নি। গত বছর অগাস্টের শেষদিকে কাবুল বিমানবন্দরে উত্তরে একটি গাড়িতে ড্রোন হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, তাদের উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের স্থানীয় শাখার একজনকে হত্যা করা। তার বদলে নিষ্পাপ ১০ জন মারা পড়ে। পেন্টাগন পরে ওই হামলাকে ‘বেদনাদায়ক ভুল’ বলে স্বীকারও করে নেয়। কাছাকাছি এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বা সেনাবাহিনীর উপস্থিতি না থাকায় জাওয়াহিরির ওপর হামলাটি যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের আগের হামলাগুলোর তুলনায় ‘একটু জটিল ছিল’ বলে মনে করেন ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অব ডেমোক্রেসির জ্যেষ্ঠ ফেলো বিল রোজিও।

আগে যেমন পাকিস্তানে ড্রোন হামলার সময় সেগুলো আফগানিস্তান থেকে উড়ে যেত, সিরিয়ায় হামলা চালানো যেত ইরাক থেকে; গত বছর তালেবানের হাতে ছেড়ে আসার পর আফগানিস্তান বা তার আশপাশে সেরকমটা করা যাচ্ছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close