প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৮ মে, ২০২২

যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি জোরদার

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গুলি করে অন্তত ১৯ শিক্ষার্থীসহ ২১ জনকে হত্যা করেছেন ১৮ বছরের এক বন্দুকধারী। গত মঙ্গলবার লাতিনো অধ্যুষিত ছোট্ট শহর ইউভালদের রব এলিমেন্টারি স্কুলে নির্বিচারে এ মানুষ হত্যা, যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক সংঘটিত বন্দুক হামলার ঘটনার মধ্যে সাম্প্রতিকতম। যদিও গত এক দশকে দেশটিতে বিদ্যালয়ে বন্দুক হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী।

গুলি করে এত শিক্ষার্থী ও দুই শিক্ষককে হত্যার এ ঘটনায় একই সঙ্গে ক্ষোভ ও দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশকারীদের মধ্যে রয়েছেন প্রভাবশালী অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদ; আছেন বিশ্বনেতারাও। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করার আহ্বান জানাচ্ছেন। ওই ঘটনায় উল্লেখযোগ্য কয়েকজন নেতার প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রতিবেদন করেছে আল–জাজিরা।

জো বাইডেন : এশিয়ায় পাঁচ দিনের সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আগ্নেয়াস্ত্রের সহিংসতা মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বছরের পর বছর ধরে চলা এ সহিংসতা থামানোর ব্যর্থতার পেছনে এ সংক্রান্ত আইন পাশ বন্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাতা ও তাঁদের সমর্থকদের দায়ী করেছেন তিনি।

গত মঙ্গলবারের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শোক জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার আদেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, ‘একটি জাতি হিসেবে আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, ঈশ্বরের নামে কখন আমরা আগ্নেয়াস্ত্র আইনের সমর্থনে সোচ্চার হব? আমাদের আগেই যা করা উচিত ছিল, তা ঈশ্বরের নামে কখন আমরা করব? আমরা কেন এ হত্যাকাণ্ড সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইছি?’

পোপ ফ্রান্সিস : স্কুলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, ‘টেক্সাসের এলিমেন্টারি স্কুলে হত্যাকাণ্ড আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমি শিশুদের জন্য, প্রাপ্তবয়স্ক যাঁরা নিহত হয়েছেন ও তাঁদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।’

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের এই ধর্মীয় নেতা বলেন, ‘নির্বিচারে অস্ত্র পাচারের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তোলার এটাই সময়। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর যেন না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আসুন, আমরা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ হই।’

আন্তোনিও গুতেরেস : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘টেক্সাসের এলিমেন্টারি স্কুলে এমন জঘন্য গুলিবর্ষণের ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত।’ টুইটারে তিনি আরও লেখেন, ‘বিশেষ করে নিহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই শিশু এটা জানাটা হৃদয়বিদারক। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও আত্মীয়স্বজন এবং ইউভালদেবাসীর প্রতি আমার সমবেদনা।’

গ্রেগ অ্যাবট : হামলার ঘটনাটিকে অর্থহীন অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তিদের জন্য টেক্সাসবাসী শোকাহত। রব এলিমেন্টারি স্কুলকে শেষপর্যন্ত নিরাপদ করতে যাঁরা প্রথমে এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের আমরা ধন্যবাদ জানাই।’

ন্যান্সি পেলোসি : মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকর করতে কংগ্রেসকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। ইউভালদের স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

কমলা হ্যারিস : যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের হৃদয়ভাঙা বেদনার বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, স্কুলে নিহতদের পরিবারের যে বেদনা তার তুলনায় মানুষের ক্ষোভ ও দুঃখের প্রতিক্রিয়া কিছুই নয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের পদক্ষেপ গ্রহণের সাহস থাকতে হবে। এটা যাতে আর না ঘটে তা নিশ্চিত করতে কিছু করতে হবে।’

বারাক ওবামা : সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইউভালদের স্কুলে গুলিবর্ষণের ঘটনাটিকে তাঁর আমলে ঘটনা আরেকটি দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেন। ২০১২ সালে কানেকটিকাটের নিউটাউনে এক বন্দুকধারীর গুলিতে ২৬ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ২০। তিনি ওই দিনটিকে তাঁর আমলের সবচেয়ে বিষাদময় দিন হিসেবে উল্লেখ করেন। মঙ্গলবারের গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ও মিশেল (সাবেক ফার্স্ট লেডি) ইউভালদের দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রকাশ করছি। এটা এমন একটি যন্ত্রণা যা আর কাউকে যেন বয়ে বেড়াতে না হয়।’ ওবামা বন্দুকের লবিং ও এ ধরনের ঘটনা এড়াতে পদক্ষেপ গ্রহণে অনিচ্ছুক রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

হিলারি ক্লিনটন : সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থ হিলারি হিলারি ক্লিনটনএঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ ঘটনায় প্রার্থনা বা শোকপ্রকাশ যথেষ্ট নয়। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যে বন্দুক সহিংসতা আমাদের শিশুদের হত্যা করছে তা বন্ধ করতে ইচ্ছুক আইনপ্রণেতাদের প্রয়োজন।’

বরিস জনসন : যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউভালদের স্কুলে নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তিনি বলেছেন, ভয়াবহ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত সকলের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

ফিনল্যান্ড : ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যাঁরা এই ঘটনায় সন্তান ও প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের জন্য আমার সমবেদনা।

তুরস্ক : গুলিতে নিহত পরিবারের প্রতি আঙ্কারার পক্ষ থেকেও সমবেদনা জানানো হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

ফ্রান্স : ফ্রান্সের পক্ষ থেকে টেক্সাসের স্কুলে গুলিবর্ষণের এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এক টুইটে এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

জার্মানি : জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গুলিতে নিহত ও আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বাইডেনকে ও মার্কিন বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে টুইট করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close