প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৯ মে, ২০২২

ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আবেদন ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। গতকাল বুধবার জোটের সদর দফতরে এই আবেদন হস্তান্তর করা হয়। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশ দুইটি। আনুষ্ঠানিক আবেদনের ফলে তা অনুমোদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই আবেদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে বলে অনেকেই আশা করছেন।

স্নায়ুযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে নিরপেক্ষ থেকেছে সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। আর তাদের ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গত কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপের নিরাপত্তা প্রকৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের জেরে নর্ডিক অঞ্চলে জনমতের পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে।

ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে আবেদনপত্রের চিঠি জোটের মহাসচিব জেনস স্টোলটেনবার্গের কাছে হস্তান্তর করেন সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত। এরপর ন্যাটো মহাসচিব বলেন, ‘এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, যা আমাদের অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।’

জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেন, ‘ন্যাটোতে যোগদানের জন্য ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের আবেদনকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আপনারা আমাদের ঘনিষ্ঠ অংশীদার, এবং ন্যাটোতে আপনার সদস্যপদ আমাদের যৌথ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে।’ ন্যাটো মনে করে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন জোটভুক্ত হলে বাল্টিক সাগরে নিরাপত্তা জোরদার হবে।

দেশ দুইটির এই আবেদন জোটভুক্ত ৩০ দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদিত হতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় এক বছর পর্যন্ত সময় লাগবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তবে গত কয়েক দিন ধরে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক বলে আসছে তারা ন্যাটো ও সুইডেনকে সদস্যপদ দেওয়ায় সমর্থনের বিষয়ে রক্ষণশীল থাকবে। এ নিয়ে অনুষ্ঠানে জোটের মহাসচিব বলেন তিনি মনে করেন ইস্যুটি সমাধান হয়ে যাবে।

জেনস স্টোলটেনবার্গ বলেন, ‘আমরা সবসমস্যার মধ্য দিয়ে কাজ করতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ অন্য মিত্রদের জোরালো সমর্থন রয়েছে বলে জানান তিনি।

বাধা দেবে তুরস্ক : এদিকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটো সদস্য পদের আবেদনের বিরোধিতা করবে তুরস্ক। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আঙ্কারাকে তার অবস্থান পরিবর্তন করতে রাজি করাতে যেকোনো চেষ্টা নিষ্ফল হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আঙ্কারার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য চাপ দেয়া হবে। এর আগে ন্যাটোর জেনারেল মিরসিয়া জিওনা আশা প্রকাশ করেছিলেন যে তুরস্ককে এই ইস্যুতে রাজি করানো যাবে।

সুইডিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হেলসিংকি ও স্টকহোম থেকে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল তুরস্ক সফরে যাবে। যদিও এরদোয়ান প্রেসব্রিফিংয়ে আপস না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এ সপ্তাহেই সুইডেন ও ফিনল্যান্ড রাশিয়ার হুমকি সত্ত্বেও ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও আগে থেকেই এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সম্পর্কে বলেছেন, দুই দেশই তুরস্কে নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কাস পার্টি (পিকেকে) ও পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (ডিএইচকেপি/সি) এর নিরাপদ অতিথিশালা। তুরস্ক এই দুই সংগঠনকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। পশ্চিমা এই সামরিক জোটের বর্তমান সদস্য সংখ্যা ৩০। ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের যোগ দিতে হলে প্রতিটি দেশের সমর্থন লাগবে। কোনো একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ ফিনল্যান্ডের যোগদানের বিষয়ে ভেটো প্রদান করলেই দেশটির ন্যাটোতে যোগদান স্থগিত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে এরদোয়ানের এই ঘোষণা দুই দেশের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়টি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।

তুরস্কের বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। ফিনল্যান্ড ও আমাদের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিরাপত্তার সক্ষমতা এবং নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে।’ সানা মারিন আশা করেন যে ফিনিশ পার্লামেন্টে ন্যাটোতে যোগদানের আবেদনের প্রস্তাব পাস হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close