আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

কপর্দকশূন্য ধনকুবের

মহম্মদ রশিদ। পাকিস্তানের ‘কপর্দকশূন্য ধনকুবের’।

ব্যাংকের বইয়ে চোখ বোলাতেই চমকে ওঠেন রশিদ। ঠিক দেখছেন তো? একটু ধাতস্থ হয়ে তিনি আবার ভালো করে বইটা পরীক্ষা করে দেখলেন। নাহ! তিনি ঠিকই দেখেছেন। কিন্তু এটা সম্ভব হলো কীভাবে? ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে এসে নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেন।

স্বামীকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে দেখে একটু অবাকই হন রশিদের স্ত্রী। চিন্তিত মুখে রশিদকে দেখে তিনিও চিন্তিত হয়ে পড়েন। কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করতেই ঘটনাটা স্ত্রীকে বলেন রশিদ। স্ত্রীকে তিনি জানান, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে! টাকার অঙ্কটা শুনেই রশিদের স্ত্রী নার্ভাস হয়ে পড়েন। দরদর করে ঘামতে থাকেন রশিদ। ভয়ে হাত-পা প্রায় ঠান্ডা হয়ে আসে। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। আনন্দ নয়, আশঙ্কাই যেন পুরো পরিবারটাকে গ্রাস করে ফেলেছিল মুহূর্তেই!

পেশায় অটোচালক মহম্মদ রশিদ। টানাটানির সংসার। পাকিস্তানের বাসিন্দা। নিজের অটো নেই, তাই ভাড়ায় একটা অটো চালান। মেয়েকে একটা সাইকেল কিনে দিতে চেয়েছিলেন রশিদ। সামান্য উপার্জন করা অটোচালকের ৩০০ টাকা সঞ্চয় করতে যেখানে বছরভর সময় লেগেছে, সেই লোকটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এত টাকা এলো কোথা থেকে? রশিদের অবশ্য বিষয়টা বুঝতে খুব একটা সময় লাগেনি। আর সে কারণেই আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছিলেন তিনি। যে আশঙ্কাটা করেছিলেন শেষমেশ সেটাই হলো। ফেডারেল ইনভেসটিগেশন এজেন্সি থেকে রশিদের কাছে ফোন আসে। ফোন পাওয়া মাত্রই রশিদ গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের লোকরা তাকে বোঝান তদন্তকারীদের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য। রশিদ রাজিও হয়ে যান।

রশিদ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘কোনো তদন্তকারী সংস্থা যদি আমাকে তুলে নিয়ে যায়, সেই ভয়ে অটো চালানোই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আতঙ্কে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।’

কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তানে এমনই ছবি উঠে আসছে। রশিদের মতো বহু গরিব পরিবারের অ্যাকাউন্টে ‘ভুতুড়ে’ টাকা এসে পড়ছে। তার পর সে টাকা গায়েবও হয়ে যাচ্ছে! রশিদের মতো একই অবস্থা হয়েছিল শারওয়াত জেহরা নামে এক ব্যক্তির। তার অ্যাকাউন্টেও কয়েক শ কোটি টাকা জমা পড়েছিল। পাকিস্তানে কালোটাকার কারবারিদের ধরতে নানা ধরনের পদক্ষেপ করছেন ইমরান খান। গত বুধবারেই তিনি বলেছিলেন, ‘কালোটাকার কারবারিদের কোনোভাবেই রেয়াত করা হবে না।’ রশিদের মতো গরিব মানুষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার পেছনে এটাও অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সে দেশের আর্থিক বিশেষজ্ঞরা। ক্ষমতায় এসে তাই ইমরান হুশিয়ারি দিয়েছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে। সম্প্রতি এক সভায় তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে এমন ‘ভুতুড়ে’ টাকার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘এটা আপনাদের চুরি যাওয়া টাকা। এই টাকা চুরি করে ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো কাজে লাগিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রীর সেই কথা শুনেছিলেন রশিদ। তাই ৩০০ কোটি টাকা তার অ্যাকাউন্টে ঢোকার পর থেকেই আতঙ্ক ঘিরে ধরে। টাকাটা অবশ্য রশিদের ভাগ্যে জোটেনি। মুকুট থেকে তিনি যেন ‘মুকুটহীন রাজা’।

তাই পাড়া-প্রতিবেশীরা রসিকতা করে তার সম্পর্কে বলেছিলেন, রশিদ তো কপর্দকশূন্য ধনকুবের!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close