আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতাল

‘১১টা বাইজ্জা গেল অহনও আহে না ডাক্তর’

নারায়ণগঞ্জের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতাল। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ৮টা। টিকিটের জন্য বহির্বিভাগের সামনে আলাদা সারিতে দাঁড়িয়েছেন নারী-পুরুষরা। সময় বাড়ার সঙ্গে বাড়ে রোগীর সংখ্যাও। অনেকে সকাল থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে আছেন। টিকিট সংগ্রহের পর শুরু হয় ডাক্তারের জন্য অপেক্ষার পালা। সকাল সাড়ে ৮টায় হাসপাতালে আসার কথা থাকলেও বেলা ১১টায়ও ডাক্তারদের দেখা মেলে না বলে অভিযোগ রোগী ও তাদের স্বজন।

গতকাল সোমবার সরেজমিন এ অবস্থা দেখা গেছে। হাসপাতাল ঘুরে চোখে পড়ে নানা অনিয়ম, দালালদের দৌড়াত্ম্য আর রোগীদের অসহায়ত্ব। ঘড়িতে তখন সাড়ে ১০টা। বহির্বিভাগের মতো হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন বিভাগের সামনেও পুরুষ-মহিলা রোগীদের দীর্ঘ সারি। এখনো আসেননি ডাক্তার। সকাল ৮টা থেকে সারিতে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহের পর ডাক্তারের অপেক্ষায় থেকে ক্লান্ত কেউ কেউ। নারীদের সারির অনেকেই বসে পড়েছেন ডাক্তারের কক্ষের সামনে। ডাক্তারের অপেক্ষায় পঞ্চাশোর্ধ্ব আছিয়া খাতুন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার সঙ্গে কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথার সমস্যা ভুগছেন। ডাক্তারের দেখা পেয়েছেন কি না- জিজ্ঞেস করতেই তার ক্ষুব্ধ জবাব, ‘১১টা বাইজ্জা গেল, অহনও আহে না ডাক্তর! কহন আইব কেডা জানে।’

আছিয়া খাতুনের সঙ্গে আশপাশের রোগীরাও গলা মিলিয়ে বলেন, ডাক্তার সবসময়েই দেরি করে। দু-তিন ঘণ্টার আগে ডাক্তারের দেখা পাবেন না। দরিদ্র বলে সরকারি হাসপাতালই তাদের ভরসা। প্রাইভেটে ডাক্তারের ভিজিটে হাজার খানিক টাকা ছাড়াও ওষুধের খরচ বহন করা তাদের সম্ভব না। একই ভোগান্তি গাইনি বহির্বিভাগের রোগীদের। বহির্বিভাগের তিনজন ডাক্তার হলেন জাহাঙ্গীর আলম, রোকসানা আক্তার ও পুনম গোস্বামী। তাদের মধ্যে দুজন আসেন ১০টার পর। কিন্তু ডাক্তার রোকশানা আক্তারের দেখা মেলেনি ১০টা ৫০ মিনিটের পরও। এ সময় ডাক্তারের অপেক্ষায় রোগীরা পরামর্শ কক্ষের সামনে ভিড় করেন।

এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঢোকার বিপরীত পাশে (মসজিদের সামনে) সারিবদ্ধ রাখা ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের মোটরসাইকেল। তারাও ডাক্তারের সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। ব্যবস্থাপত্রে কী ওষুধ লেখা হবে, এ নিয়ে বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাতে রোগীরা ভালোভাবে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেতে পারেন না। এছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকের দালালদের উৎপাতে রোগীদের ভোগান্তি আরো বাড়ছে। এমনকি বহির্বিভাগে সিরিয়াল পেতেও দালাল আছে।

কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের দেয়ালে পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলাযুক্ত নানা সাইনবোর্ড-ব্যানার টানিয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি টিভি ক্যামেরার মাধ্যমে চলা নিরাপত্তা তদারকির মধ্যেই চলছে দালালদের দৌরাত্ম্য। জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোতালেব বলেন, ‘নতুনভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ায় ডাক্তারদের কিছুটা দেরি হচ্ছে, তবে এ বিলম্ব থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি- যাতে রোগীরা উন্নত সেবা পায়।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close