রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ২৬ মার্চ, ২০২৩

ড্রেনে-রাস্তায় আবর্জনা বৃষ্টিতে ভোগান্তি

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (গাসিক) টঙ্গী এলাকার ওয়ার্ডগুলোতে প্রয়োজনীয় ডাস্টবিন নেই। ফলে রাস্তার পাশে ও ড্রেনে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। এতে ওয়ার্ডের ড্রেনগুলো ভরে গেছে। এদিকে সিটি করপোরেশনের অনুমতিতে বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ভ্যানের মাধ্যমে বর্জ্য অপসারণ (ভ্যান সার্ভিস) চালু করেছে কিছু সামাজিক ও সেবামূলক সংগঠন। তবে নাগরিকদের অভিযোগ, এলাকায় ভ্যান সার্ভিসের চালু বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কোনো নিয়মণ্ডনীতি না থাকায় ইচ্ছামতো টাকা আদায় করে উদ্যোক্তারা। এ নিয়ে কেউ আপত্তি জানালে বাড়ি থেকে ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে টঙ্গী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন এলাকায় কিছু পাকা ডাস্টবিন তৈরি করা হয়। তবে ধীরে ধীরে এসব ডাস্টবিন বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে গাজীপুরকে সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর গত এক দশকে টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা এলাকায় নতুন করে কোনো ডাস্টবিন তৈরি করা হয়নি। এতে এলাকার আবর্জনার বেশির ভাগই ড্রেন, রাস্তাসহ যত্রতত্র পড়ে থাকে।

সিটি কপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, টঙ্গী অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ১৫০ টন বর্জ্য জমা হয়। তবে বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো শুধু বড় রাস্তার পাশের আবর্জনা পরিষ্কার করে। আবাসিক এলাকার অলিগলিতে ঢোকে না এসব গাড়ি। ফলে ড্রেন বা রাস্তার পাশেই আবর্জনা ফেলেন নাগরিকরা। বৃষ্টি হলে ও বর্ষা মৌসুমে ময়লা জমা ড্রেনের পানি উপচে রাস্তা এবং বাড়িঘরে ঢোকে। এতে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। তা ছাড়া বছরজুড়ে আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টঙ্গীর শিল্পাঞ্চল ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় অধিকাংশ ড্রেনের ওপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এ কারণে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্ধাতি স্থান না থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে হোসেন মার্কেট ও দত্তপাড়া, মরকুন, স্টেশন রোড, গাজীপুরা ও টেলিফোন শিল্প করপোরেশনের সামনে আবর্জনা ফেলা হয়। এতে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

দত্তপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে আবর্জনার স্তূপ জমে আছে। রাস্তার ময়লা ড্রেন আটকে গেছে। এতে ওই ড্রেন দিয়ে পানি চলাচল করতে পারছে না। সিটি করপোরেশনকে জানালেও তারা ভ্রুক্ষেপ করে না।

গাজীপুরা এলাকার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের কোনো সুপারভাইজারকে এলাকার ময়লা-আবর্জনার খোঁজ নিতে দেখা যায়নি।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, নতুন নিয়ম অনুযায়ী ড্রেনের ময়লা অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ফোন করে জানাতে হয়। কিন্তু ফোনে কাউন্সিলরদের পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

৪৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সফিউদ্দিন সফি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বার্ষিক মিটিংয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়রকে বলা হয়েছে। তার আগে ৬টি মিটিংয়েও বলা হয়েছে। বর্ষার আগেই ওয়ার্ডের ড্রেনগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হলে জলজট থেকে বাসিন্দারা মুক্তি পাবে।

জানতে চাইলে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডাস্টবিন দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য টেন্ডার করে দায়িত্ব দিয়েছেন মেয়র। তবে পরিকল্পিত কোনো ড্যাম্পিং প্লেস সিটির নেই।’

গাসিকের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের এক নম্বর ব্লকের ওয়ার্ল্ড ভিশনের সাধারণ সম্পাদক সানজিদা জেরিন সুমা বলেন, ‘মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য শুধু সিটি করপোরেশনই দায়বদ্ধতা নয়। যেহেতু এলাকা আমাদের, কিছু দায়বদ্ধতা আমাদেরও আছে। এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষ থেকে প্রতি তিন মাস পর পরিচ্চন্নতার ক্যাম্পেইন করা হয়।’

টঙ্গীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জানতে গত বৃহস্পতিবার থেকে পরের তিন দিন গাসিকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরণের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।

গাসিকের টঙ্গী এলাকার সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে পর্যাপ্ত জনবল ও যানবাহন নেই। এছাড়া নির্ধারিত কোনো ডাম্পিং প্লেস না থাকায় বর্জ্য অপসারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close