মো. সৈকত সোবাহান, বদলগাছী (নওগাঁ)

  ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩

বদলগাছীতে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসব

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কসবা গ্রামে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব চলছে। জমির মালিকরা তাদের জমি ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। এসব ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটার মালিক ও রাস্তার ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করছেন। জমি থেকে গভীর করে মাটি তোলায় আশপাশের ফসলি জমিগুলোতে ধস দেখা দিয়েছে। এভাবে মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে কসবা গ্রামের ফসলি মাঠটি খাল-বিলে পরিণিত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তাদের অভিযোগ, এখানে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে ৮-১০ বছর ধরে। এতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। মাটি কাটা বন্ধের জন্য ভূমি অফিস, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার নেই। সরেজমিনে কসবা গ্রামে ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের ফসলি মাঠটির ৮-১০টি স্থানে বিশাল অংশজুড়ে দুই-তিন ফসলি জমি গভীর করে মাটি কাটার কাজ চলছে। প্রতিটি স্থানেই একসঙ্গে ৫-৬টি ট্রাক্টর এসে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচলে সাগরপুর থেকে কসবা গ্রাম পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার পাকা সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। সাগরপুর গ্রাম থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ গজ দূরে কসবা ফসলি মাঠের ৪-৫ বিঘা জমিজুড়ে গভীর করে মাটি কেটে ট্রাক্টরে তোলা হচ্ছে। সেখানে একটি লোক টালি খাতা নিয়ে বসে আছে। সেই খাতাই ফসলি জমির মাটি বিক্রির হিসাব লিপিবদ্ধ আছে।

সেখানে থাকা একটি ট্রাক্টর চালক বলেন, জমির মালিক তার জমি এক ব্যক্তিকে ইজারা দিয়েছেন। ইজারাদাররা প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৪০০ টাকা দাম নিচ্ছে। রাস্তার ঠিকাদার ও ইটভাটার মালিক প্রতি ট্রাক্টর মাটি ৮৫০ টাকায় কিনছেন। প্রতিদিন গড়ে একটি ট্রাক্টর ১৫ থেকে ২০টি ট্রিপ দিচ্ছেন। শাহিন নামে একজনের ইটভাটায় মাটি নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানায় ওই ট্রাক্টর চালক।

ওই স্থানটির প্রায় ৫০ গজ দূরত্বে একইভাবে মাটি কাটার কাজ হচ্ছিল। সেখানে ৪-৫টি ট্রাক্টর এসে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। এই স্থান থেকে ৭০ গজ দূরত্বে গিয়ে দেখা যায় সেখানে ৩-৪ বিঘা জমিজুড়ে চলছে একইভাবে মাটি কাটা। এই মাটি কাটতে গিয়ে বরেন্দ্রর ডিপটিউবওয়েলের আন্ডারগাউনের প্রায় ১২০ থেকে ১৬০ ফিট পাইপ কেটে তুলে ফেলা হয়েছে।

কসবা, সাগরপুর ও পচার মোড়ের গ্রামবাসীরা জানান, ৫-৬ জন জমির মালিক তাদের জমির বালু ও মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়েছেন। আর ব্যবসায়ীরা দুই-তিন ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটার মালিক ও রাস্তার ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করছেন।

ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি বন্ধ করতে তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছিলেন। কিন্তু একাধিক জনপ্রতিনিধি ইটভাটা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের বিষয়টি নজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ওই এলাকার বাসিন্দা সবুজ, সোহেল, জাহিদ, মুনজুর ও আরমানসহ বেশকিছু ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফসলি জমি কেটে মাটি বিক্রি বন্ধের জন্য ভূমি অফিস, ইউএনও অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের জমিজমা ধসে গেলে কার কি।

কসবা গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, গত ২০১৫ সালে র‌্যাব সদস্যরা এসে কসবা পচার মোড়ে ট্রাক্টরসহ মাটি উত্তোলনকারীকে ধরেছিল। তারপরও এখানে মাটি কাটার কাজ বন্ধ হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, জমিতে ফসল হয় না। তাই জমির মালিক আমাদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করছেন। এতে ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছেন তিনি। ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, কোনো জমির মালিক নিজ ইচ্ছা মতো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারবে না। কেউ নিজ ইচ্ছা মতো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসার সাবাব ফারহান বলেন, ফসলি মাঠে জমির উর্বর মাটি কেটে বিক্রি দেওয়ায় অন্য জমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জমির শ্রেণিও পরিবর্তন হচ্ছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বদলগাছী কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মোশাব আলী বলেন, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সাগরপুর গ্রাম থেকে কসবা গ্রাম পর্যন্ত ৮০ মিটার সড়ক পাকাকরণ করেছে বলে আমি জেনেছি। মাঠের মাটি উত্তোলন কাজে ডিপ টিউবওয়েলের আন্ডারগাউন্ডের পাইপ ফেটে ফেলার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এ বিষয়ে বদলগাছী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিয়া খাতুন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, আমি একটি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। সেখানে তহশিলদারকে পাঠিয়েছি শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে কিনা জেনে নিতে। তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close