নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

র‌্যাব আইনের আওতায় থেকে কাজ করে

চৌধুরী মামুন

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে যেখানে প্রয়োজন, কেবল সেখানেই শক্তি প্রয়োগ করা হয়- দাবি করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) বিদায়ি মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, আইনে র‌্যাবকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, তার ভেতরে থেকেই সদস্যরা কাজ করেন।

র‌্যাব ডিজি হিসেবে দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন র‌্যাবের সাফল্য, আগামী নির্বাচন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং র‌্যাবের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধজ্ঞাসহ নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।

নিষেধাজ্ঞার কারণেই ইদানীং র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যুর সংখ্যা কমে গেছে কি না?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়। যেখানে যেটুকু প্রয়োজন, সেটুকুই আমরা শক্তি প্রয়োগ করি। একজন অপরাধী দৌড় দিল, র‌্যাব সদস্যকে ধাক্কা দিল, আক্রমণ করল, তাকে গুলি করে দিতে হবে? সিচুয়েশন যা ডিমান্ড করে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।’

‘গুরুতর’ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত ডিসেম্বরে র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর। নিষেধাজ্ঞার তালিকায় র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক পুলিশের বিদায়ি আইজিপি বেনজীর আহমেদের পাশাপাশি র‌্যাবের বিদায়ি মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নামও ছিল।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে দায়িত্ব পালন করি। অপরাধীরা যে কত কুখ্যাত, তাদের সামনে যা আসে, সব বাধা উপেক্ষা করে তারা অপরাধ সংঘটিত করতে চায়। আমরা যখন তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াই, তখন অপরাধীরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে অপরাধ সংঘটিত করতে চায়।’

তিনি বলেন, ‘যখনই অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন কিন্তু আমরা (র‌্যাব) থাকি না। প্রথমে থানা পুলিশ আসে। ম্যাজিস্ট্রেট আসে। সুরতহাল হয়। মরদেহ মর্গে নেওয়া হয়। অভিজ্ঞ চিকিৎসক ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। থানায় মামলা হয়। ওপেন কোর্টে বিচার হয়। দুই পক্ষের বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়। এসবের মধ্যে র‌্যাবের কোনো ভূমিকা থাকে না। সরকার ও গণমাধ্যম এসব মনিটরিং করে। এখানে র‌্যাবের কতটুকু ভূমিকা আছে, সেটা আমারও প্রশ্ন। আমরা যা করি, স্বচ্ছতার সঙ্গে করি।’

মতবিনিময় সভার শুরুতেই আবদুল্লাহ আল মামুন র‌্যাব ডিজি থাকাকালীন তার দায়িত্ব পালনের সময় সফলতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল করোনাকালে র‌্যাবের মহাপরিচালকের দায়িত্বভার গ্রহণ করি আমি। প্রাণঘাতী এই মহামারির নাজুক সময়টিতে নিজ বাহিনীর সদস্যদের সংক্রমণরোধ থেকে শুরু করে সরকার ঘোষিত লকডাউন নিশ্চিত এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল র‌্যাব ফোর্সেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ আমরা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছি।’

এ ছাড়া মহামারির সময় র‌্যাব ফোর্সেস দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত সদস্যকে ছেড়ে চলে গেলেও র‌্যাব সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের র‌্যাবের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নিয়ে এসে রাজধানীতে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। করোনার সময় র‌্যাব মাঠপর্যায়ে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সর্বোচ্চ পেশাদারত্বের মনোভাবের মাধ্যমেই অতীতের ক্ষিপ্রতায় উগ্র জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকের বিস্তার নিরসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করে র‌্যাব।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র‌্যাবের জোরালো অভিযানে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে। জলদস্যুমুক্ত সুন্দরবনের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালে র‌্যাবের জোরালো অভিযান ও প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঁশখালী, মহেশখালী, কুতুবদিয়া অঞ্চলের ১২টি জলদস্যু বাহিনীর ৭৭ জন দস্যু বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

গত দুই বছরে মানব পাচারে জড়িত ৮ শতাধিক মানব পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ-সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত ৬ শতাধিক অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close