নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৫ আগস্ট, ২০২১

যে যেভাবে পারছে ঢুকছে ঢাকায়

কঠোর বিধিনিষেধেও আটকানো যাচ্ছে না ঢাকায় মানুষের প্রবেশ। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাকে, পিকআপে, প্রাইভেট কারে করে আমিনবাজার আসছে মানুষ। সেখান থেকে হেঁটে গাবতলী সেতু পার হয়ে তারা রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। হেঁটে এলে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হননি কেউ। তবে মুখে মাস্ক না থাকলেই আটকানো হয় চেকপোস্টে। গতকাল বুধবার ঢাকার ডেমরার সুলতানা কামাল সেতু, পোস্তগোলা বুড়িগঙ্গা ১ম সেতু, বাবুবাজারের বুড়িগঙ্গা ২য় সেতু, মোহাম্মদপুরের বসিলা, মিরপুরের গাবতলীতে ঢাকামুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। যে যেভাবে পারছেন, সেভাবেই ঢাকায় ঢুকছেন। কেউ রিকশা-ভ্যানে আবার কেউ হেঁটেই ঢুকছেন। অবস্থা এমনই যেন, বাংলাদেশের গন্তব্য ঢাকা।

নওগাঁ থেকে আসা সাদ্দাম ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। গত মঙ্গলবার মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পর ঠিকাদার ফোন দেয়। সেই ফোনের পরিপ্রেক্ষিতেই ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেন সাদ্দামসহ আটজন। দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় প্রতিজন এক হাজার টাকা করে ট্রাকে চড়ে আমিনবাজার এসেছেন। সেতু পার হয়ে তারা আটজন গাবতলী থেকে ৬০০ টাকায় ভ্যানে মিরপুর ১৪ নম্বর যান।

ফরিদপুর থেকে আসা রাতুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, এত দিন অফিস বন্ধ ছিল। অফিস থেকে ফোন দিয়ে দ্রুত ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। এজন্য ভেঙে ভেঙে চলে এসেছি। গাড়ি না চলায় অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে।

গাবতলী সেতু দায়িত্বরত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আজ গাড়ির চাপ কম, তবে সাধারণ মানুষ বেশি। যারা হেঁটে আসছেন, তাদের আমরা সেভাবে কিছু বলছি না। তবে মাস্ক না পরলে আটকানো হচ্ছে। এর বাইরে প্রতিটি গাড়ি রাজধানীতে ঢোকার যথাযথ কারণ জানতে চাচ্ছি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে। এদিকে, রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকামুখী যাত্রীরা ভিড় করছেন। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এ ঘাটে মানুষের ভিড় বেশি ছিল।

রাজবাড়ীর পাংশা থেকে মাকে নিয়ে রাজধানীতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস। দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ব্যবসা করি। সেখানেই পরিবার নিয়ে থাকি। ঈদের এক দিন পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে বাড়ি ফিরে আসি। এর মধ্যে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আজ মাকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছি। মাকে ডাক্তার দেখাতে হবে।’

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আসতে পথে কোথাও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় কয়েক জায়গায় পুলিশ দেখেছি। তবে আমাদের কোথাও বাধা দেয়নি। তবে গণপরিবহন না থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ঘাটে আসতে হলো। এখন নদী পাড়ি দিয়ে ভালোয় ভালোয় কোনো যানবাহন পেলেই ঢাকা যেতে পারব।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন বলেন, ‘যানবাহন ও মানুষের চাপ কমে যাওয়ায় ফেরির সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে এখন ছোট-বড় মিলিয়ে মোট নয়টি ফেরি চলাচল করছে। সকালের দিকে মানুষের চাপ কম ছিল, তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে।’

মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সচিবালয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের মেয়াদ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ১১ আগস্ট থেকে দোকানপাট খুলে দেওয়া হবে। চলবে গণপরিবহন, খুলবে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close