নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৪ জুন, ২০২১

‘বিচ্ছিন্ন’ ঢাকায় বাস দেখলেই হুড়োহুড়ি

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউনে সারা দেশ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন’ হয়ে গেছে ঢাকা। আন্তজেলার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের কেবল রাজধানীতে চলাচল করা বাসগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এরমধ্যে আবার প্রতি দুই সিটে বসছেন একজন করে। ফলে যাত্রীর তুলনায় বাস অনেকটা কম। তাই একটি বাস দেখলেই হুড়োহুড়ি করে উঠতে দেখা যায় যাত্রীদের। এমন অবস্থায় বেশি বিপাকে পড়ছেন চাকরিজীবী নারী ও অসুস্থরা।

আশপাশের যে কয়েকটি জেলায় সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, তার মধ্যে মানিকগঞ্জের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর যানবাহন চলাচল করে। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ গাবতলী আর উত্তরা। আমিনবাজার ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় বাসের জন্য যাত্রীদের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে বাসে উঠতে পারেননি। অনেকক্ষণ পরপর যাও একটা বাস আসছে, তাদের উঠতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে অফিসগামীদের। যারা বাসে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন, তারা অনেকে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সিটের দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে কোনো কোনো বাসে। এ ছাড়া আসাদগেট, শুক্রাবাদ ও রাসেল স্কয়ার এলাকা ঘুরেও বাস কম দেখা গেছে। সকাল থেকে এসব সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি ছিল।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মালিহা আক্তার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারছি না। যে বাসগুলো আসছে পুরুষরা আগে উঠে যাচ্ছেন। আমরা নারীরা উঠতেই পারছি না। এমন করেই প্রতিদিন অফিসে যেতে হয়, আবার অফিস থেকে ফিরতে হয়।’

রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘এ রুটে চলাচলকারী অন্য জেলার বাসের সংখ্যা একেবারেই নেই। তাই সরকারের উচিত বিআরটিসির বাস নামানো, যাতে করে মানুষকে দুর্ভোগ না পোহাতে হয়। সড়কে গণপরিবহন একেবারে নেই বললেই চলে। যা আসছে সেখানেও সিট খালি নেই। এখন সময়মতো অফিসে পৌঁছানোই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।’

সড়কে গণপরিবহনের তুলনায় ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি জানিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক সার্জেন্ট সুমন মিয়া বলেন, ‘সকাল থেকে সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কিছুটা বেশি। গণপরিবহন তুলনামূলক কম। আর এই সময়টায় মানুষের চাপ বেশি থাকায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে যানজট নিয়ন্ত্রণ করার।’

মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ডায়ালাইসিস করার জন্য এসেছেন সাহারা বেগম। গাবতলীতে ভাগনিকে নিয়ে হাঁটতে দেখা গেল তাকে। সাহারা বেগম বলেন, ‘অনেক কষ্ট হয়েছে অসুস্থ শরীর নিয়ে। তিনবার গাড়ি পাল্টেছি, টাকাও বেশি খরচ হয়েছে।’ তিনি জানান, মানিকগঞ্জ থেকে আসার পথে রাস্তায় কোথাও পুলিশকে আটকাতে দেখেননি।

ঢাকার গ্রিন রোডে অবস্থিত ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন ওবায়দুর রহমান। থাকেন সাভারের গেন্ডা এলাকায়। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে অফিসে আসতে এক ঘণ্টা লাগত, এখন দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। রাজধানীর উত্তরায় এই চিত্র দেখা গেছে। উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় সকাল ৮টায় বাসের অপেক্ষায় যাত্রীদের দীর্ঘলাইন দেখা গেছে। আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও অনেকে বাসে উঠতে পারেননি। অনেকক্ষণ পরপর যাও একটা বাস আসছে, তাতে উঠতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে অফিসগামীদের। যারা বাসে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন, তারা অনেকে সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। সিটের দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে কোনো কোনো বাসে।

আবার অনেকে দীর্ঘ সময় বাস না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন। এ ছাড়া আবদুল্লাহপুর পয়েন্টে বাস ঘুরিয়ে দেওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

বনানী, মালিবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় খোঁজ নিয়ে বাস সংকটের খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ঢাকার পার্শ্ববর্তী মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুরসহ মাদারীপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে এসব এলাকার কোনো গণপরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে পারছে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close