দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি

  ২০ জানুয়ারি, ২০২৪

গান গেয়েই চলে আরজ আলীর সংসার

এক হাতে একতারা আরেক হাতে খঞ্জনী। সঙ্গে কেউ নেই। আছে শুধু শ্রুতিমধুর কণ্ঠ। সেই শ্রুতিমধুর কণ্ঠকে একতারার সুরের সঙ্গে মিলিয়ে গাইছেন গান। সুরেলা কণ্ঠের গান শুনে জড়ো হয় ঘুরতে আসা লোকজন। গানে মুগ্ধ হয়ে কেউ ১০ কেউবা ২০ টাকা করে বকশিস দেন। দিনশেষে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে আরজ আলী বাউলের সংসার।

প্রতিদিনই আরজ আলীর দেখা মিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে, যা কোহিনুর টিলা নামে পরিচিত। ওই পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক আসেন। আর ঘুরতে আসা পর্যটকদের গান শুনিয়ে মুগ্ধ করাই আরজ আলীর পেশা।

দুর্গাপুর উপজেলার বাকলজোড়া ইউনিয়নের বালিচান্দা গ্রামের বাসিন্দা আরজ আলী। স্ত্রীকে নিয়েই ৬২ বছর বয়সি আরজ আলীর সংসার। দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের বাবা তিনি। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেও বিয়ে করে জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরে থিতু হয়েছে। এখন ছেলেমেয়েরা তেমন খোঁজ খবর নেয় না।

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজয়পুরের চিনামাটির পাহাড়ে গেলে দেখা যায় আরজ আলীকে। তার গান শুনতে চারপাশে ভিড় জমিয়েছে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। আসরও জমেছে বেশ। গান শেষ হতেই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় আরজ আলীর। আরজ আলী জানান, ‘নবীর দিক্ষা-করিও না ভিক্ষা। আমাদের নবী ভিক্ষা পছন্দ করতেন না। তাই আমিও ভিক্ষা করি না। আল্লাহ ভালো কণ্ঠ দিয়েছে। তাই কণ্ঠ বিক্রি করেই বাঁচি। মানুষ আমার কণ্ঠে গান শুনে খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়েই সংসার চলে।’

তিনি বলেন, ‘জন্মের আড়াই বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছি। কিছু বুঝে ওঠার আগে হারিয়েছি মাকেও। তাই জন্মের পর থেকেই আমি হতভাগা। এক জীবনে বেশি কিছু চাওয়ার নেই, বাকি জীবনটা গান গেয়ে আনন্দে কাটাতে চাই।’ ঘুরতে এসে গানের আসরে অংশ নেওয়া ফয়েজ আহম্মদ হৃদয় বলেন, আমরা চিনামাটির পাহাড়ে ঘুরতে এসে গানপ্রেমী আরজ আলীকে পেলাম। ঘুরতে আসা লোকজনকে আরজ আলী গান শুনিয়ে আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। আমরাও গান শুনে আনন্দ পেয়েছি।

দুর্গাপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক তোবারক হোসেন খোকন বলেন, আরজ আলী খুবই প্রতিভাবান শিল্পী, সে যে কারো নাম বা স্থান যেকোনো কিছু নিয়েই তাৎক্ষণিক গান বানিয়ে ফেলতে পারেন। তবে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে আরজ আলীর সাংস্কৃতিক প্রতিভা। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমেই কেবল তার প্রতিভা রক্ষা করা সম্ভব। আমি চাই সরকার থেকে তাকে সহযোগিতা করা হোক তাতে তার প্রতিভা অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, জানতে পেলাম বাউল আরজ আলী পর্যটকের গান শুনিয়ে আনন্দ দেন। তার সঙ্গে আমার এখনো পরিচয় হয়নি। তবে তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব। পর্যটন এলাকাগুলো নিয়ে আমাদের নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে কিছু কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। অচিরেই তা বাস্তবায়ন হবে।

২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে গান গেয়ে আরজ আলী সাত হাজার টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। তার গান শুনে মুগ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসক একটি বেহালা উপহার দেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close