reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা

দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করার জন্য এ দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, সংগীতশিল্পী, চলচ্চিত্রকারসহ বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অনন্য। তাদের ভূমিকা শুধু যুদ্ধের ৯ মাসেই সীমিত ছিল না। ব্রিটিশ আমলে পরাধীনতার বিরুদ্ধে পরবর্তীকালে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রতিটি সংগ্রামে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ভাষা আন্দোলন, স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন এবং ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানে তারা ছিলেন অনুপ্রেরণাদানকারী। কেউ কেউ সামনের কাতারে। বাঙালি জাতির ওপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ, অত্যাচারের বিষয় সাধারণ মানুষকে অবগত করেছিলেন তারা। বাংলাদেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে এ কথা সবাই জানত। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বিভিন্ন সারণীর মাধ্যমে যে সত্যটাকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছিল। তারাই সর্বপ্রথম পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি স্বতন্ত্র অর্থনীতি চালুর কথা বলেছিলেন। বাঙালি সাংবাদিকরা তুলে ধরেছেন আন্দোলনের প্রতিটি খবর শিল্পী-সাহিত্যিকরা গল্প-উপন্যাস, নাটক, গানসহ লেখনীর মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক মৌলিক ও অর্থনৈতিক অধিকারের প্রতি সচেতন করে তুলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কখনো স্বতন্ত্র, কখনো একই সঙ্গে করেছেন আন্দোলন। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরিতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন বুদ্ধিজীবীরা।

বিভিন্ন তথ্য ও গবেষকদের লেখা থেকে জানা যায়; ভারতে আশ্রয় নেওয়া বুদ্ধিজীবীরা গড়ে তোলেন ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি’ যার সভাপতি ছিলেন ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। তিনি পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন। এ ছাড়া তাকে সভাপতি এবং জহির রায়হানকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ। বুদ্ধিজীবীদের সংগঠন মুজিবনগর সরকারের অধীনে পরিকল্পনা সেল গঠন করেন। বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের কাছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সরবরাহ ও বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় সংসদীয় পার্টির সঙ্গে সাক্ষাৎ সাহায্যের আবেদন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বক্তব্য প্রদান, শরণার্থীদের উৎসাহ প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রাখেন। শরণার্থীশিবির শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে ৫৬টি স্কুল খুলে শরণার্থীদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করে। বাঙালি বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, যা বাঙালি মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের প্রেরণার উৎস ছিল। এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখেন।

স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য। তারা আরও মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন ও পঙ্গু করতে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বাসা এবং কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে। অনেকে ভাগ্যবশত মৃত্যু এড়াতে পেরেছিলেন। পরে বিক্রমের সঙ্গে যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন কিংবা মুজিবনগর সরকারের পক্ষে বিদেশে জনমত গঠনে কাজ করেছেন। দিল্লি ও কলকাতার লেখক বুদ্ধিজীবীরাও সে সময় বাংলাদেশের পক্ষে কলম ধরেছেন। জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। শাবানা আজমির বাবা বিখ্যাত উর্দু কবি কাইফি আজমি নিজের টাকা খরচ করে লঙ্গরখানা খুলেছিলেন। তাদের সেই ভূমিকার কথা বিস্মৃত হওয়ার নয়। ১৯৭২ সালে জাতীয়ভাবে প্রকাশিত বুদ্ধিজীবী দিবসের সংকলন, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও আন্তর্জাতিক নিউজ ম্যাগাজিন ‘নিউজ উইক’-এর সাংবাদিক নিকোলাস টমালিনের লেখা থেকে জানা যায়, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ১ হাজার ৭০।

* জহির ইলিয়াছ খান

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close