জয় দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে আজ বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ।

এর আগে দু-দলের মধ্যকার তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা। আজ প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে দুপুর আড়াইটায়। প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পায় শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ উইকেটের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় বাংলাদেশ।

তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পেসার নুয়ান থুশারার দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে বাংলাদেশকে ২৮ রানে হারিয়ে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্গা। সিরিজে প্রথম খেলতে নেমে ২০ রানে ৫ উইকেট নেন থুশারা। ইনজুরি আক্রান্ত মাথিশা পাথিরানার জায়গায় ওয়ানডে সিরিজের দলে সুযোগ পেয়েছেন থুশারা। এজন্য থুশারাকে সামলানোর পরিকল্পনা নিয়ে ওয়ানডে খেলতে নামতে হবে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস পেতে হলে আমাদের ভালো শুরু করতে হবে। আশা করি, আমরা নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে পারব।’

দু-দলের মধ্যকার সর্বশেষ ওয়ানডেটি ‘টাইম আউট’ ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এবং পরবর্তী সময়ে এটি টি-টোয়েন্টি সিরিজেও প্রভাব ফেলে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার ওপেনার আবিষ্কা ফার্নান্দোকে আউট করে ‘টাইম আউট’র অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনেন বাংলাদেশের পেসার শরিফুল ইসলাম। পুরো সিরিজে দুই দলের খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাষা ও সম্পর্ক যথেষ্ট সৌহার্দপূর্ণ ছিল না। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে আউট হওয়ার পর লঙ্কান খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তাওহীদ হৃদয়ের। পরে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর প্রতিপক্ষকে খোঁচা মেরে ‘টাইম আউট’ উদযাপন করে শ্রীলঙ্কা, যা বাংলাদেশ শিবিরে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

তৃতীয় টি-টোয়েন্টির পর বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল জানান, ‘টাইম আউট’ ঘটনা থেকে এখনো বেরিয়ে আসতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। তবে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। শান্ত বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। তাদের বর্তমানে থাকা উচিত। আমরা নিয়মের মধ্যে ছিলাম (টাইম আউট নিয়ে)। কিন্তু এটি নিয়ে তারা মেতে আছে। আমি এটি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নই।’ তবে পরিস্থিতি যেমন অবস্থায় আছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে ওয়ানডে সিরিজেও ‘টাইম আউট’ বিষয়টি বড় আকার ধারণ করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

গত বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসান ‘টাইম আউট’র মাধ্যমে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে সাজঘরে ফেরত পাঠানোর ম্যাচটি ৩ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ৮২ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তখনকার টাইগার অধিনায়ক সাকিব। এখন পর্যন্ত ৫৪টি ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে টাইগাররা ১০টিতে এবং লঙ্কানরা ৪২টি জিতেছেন। ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরটি শ্রীলঙ্কার জন্য হতাশার ছিল। ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছিলেন লঙ্কানরা। তার আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে সব সিরিজই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। এছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং এশিয়া কাপ জয়ের নজির আছে লঙ্কানদের। বাংলাদেশের মাটিতে টাইগারদের বিপক্ষে ১৪টি ম্যাচে জয় ও ৬টিতে হেরেছে শ্রীলঙ্কা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কাই এগিয়ে। কিন্তু ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শ্রীলঙ্কার আধিপত্য চুরমার করে বেশ কিছু ম্যাচ জিতেছেন টাইগাররা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাম্প্রতিক ফল বিবেচনায় ওয়ানডে সিরিজে ফেভারিট বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দল : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাইজুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, তানজিম হাসান সাকিব ও মুস্তাফিজুর রহমান।

শ্রীলঙ্কা দল : হাসারাঙ্গা ডি সিলভা, চারিথ আসালঙ্কা, কুশল মেন্ডিস (অধিনায়ক), সাদিরা সামারাবিক্রমা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, দাসুন শানাকা, মহেশ থিকশানা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, নিরোশান ডিকবেলা, দিলশান মাদুশঙ্কা, নুয়ান থুশারা, মাথিশা পাথিরানা, আকিলা ধনাঞ্জয়া, বিনুরা ফার্নান্দো, কামিন্দু মেন্ডিস, আবিষ্কা ফার্নান্দো ও জেফরি ভান্ডারসে।