০৪ মার্চ, ২০২১

৩ বছর পর লিগ শুরুর আশ্বাস

মেধাবী ক্রিকেটারে ঠাসা লক্ষ্মীপুর জেলা। যেখানে জাতীয় পর্যায়ে খেলছে অনেক ক্রিকেটার। যার মধ্যে হাসান মাহমুদ খেলছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে, অনূর্ধ্ব-১৭ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তানজীদ ইমন, এইচপি দলে আছেন নোমান চৌধুরী সাগর, অনূর্ধ্ব-১৬/১৭ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরীফ রুপম। সেই লক্ষ্মীপুর জেলার লিগ হচ্ছেন গত তিন বছর ধরে। অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো। এখানে সর্বশেষ লিগ হয়েছিল ২০১৭ সালে। আর দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট তো নেই বললেই চলে। এতে হতাশা বেড়েছে স্থানীয় ক্রিকেটার ও ক্লাবগুলোর মধ্যে। আর আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্লাবের মালিকরা। লিগ না হওয়ায় সবার মধ্যেই রয়েছে হতাশা আর চাপা ক্ষোভ। তবে এই বছরের লিগ হবে বলে প্রতিদিনের সংবাদকে আশ্বাস দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তবে অনেক ক্লাবের মালিক ও স্থানীয় ক্রিকেটাররা প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এর আগেও আমাদের এমন আশ্বাস হয়েছিল তবে নানা অযুহাতে লিগ শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ। তাই আমরা অনেকভাবেই অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তাই এবার আমরা কোনো অযুহাত শুনতে চাই না। আমাদের একটাই দাবি অতি দ্রুত যেন লিগ শুরু করা হয়।’

এই বছর অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলার ১৬টি দল নিয়ে ক্রিকেট লিগের ঘোষণা দিয়েছিল লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। অনেক আগেই তৈরি হয়েছিল ১৬টি দল নিয়ে চারটি গ্রুপ। যেখানে গত ২৫ ফেব্রয়ারি উইনার্স ক্লাব বনাম পৌর ক্রীড়া চক্রের মধ্যেকার ম্যাচ দিয়ে লিগ শুরু কথা ছিল। কিন্তু লিগের সেই ফিক্সার শুরুর জায়গাতেই থেমে আছে। আর লিগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন পার করছে স্থানীয় ক্রিকেটার ও ক্লাবের মালিকরা। কী কারণে লিগ শুরু হচ্ছে না তাও অজানা স্থানীয় ক্রিকেটার ও ক্লাবের মালিকদের কাছে। কেউ বলছেন স্পন্সরের অভাব আবার কেউ বলছেন অনীহার কথা। স্থানীয় ক্রিকেটার ও ক্লাবের মালিকরা প্রতিদিনের সংবাদকে জানায়, ‘লক্ষ্মীপুরে বাকি সব খেলা চললেও শুধু বাধা আসে ক্রিকেট শুরুর সময়। লিগের ১৬টি দলের ৩২০ জন খেলোয়াড়ের রুটি রুজির পথ বন্ধ এই লিগ শুরু না করার কারণে।’

এদিকে লিগ শুরুর ঘোষণা শুনে ক্লাবগুলো তাদের অর্থ খরচ করে ক্রয় করেছে ক্রিকেটের সব সরঞ্জাম। তাদের প্রস্তুতি ছিল না কোনো ঘাটতি। কিন্তু হঠাৎ করে লিগ স্থগিত হওয়ায় তাদের জমানো টাকায় ক্রিকেট সরঞ্জাম কিনেও বিপাকে পরেছেন ক্লাবগুলো। ক্রিকেটার ও ক্লাবগুলোর অভিযোগ, লিগ হওয়ার আশ্বাস না পেলে তারা ক্রিকেটের সরঞ্জাম কিনে তাদের জমানো অর্থ নষ্ট করতেন না। এখন লিগ স্থাগিত হওয়ায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন তারা। গত ফেব্রুয়ারিতে লিগ শুরুর আশ্বাস পেয়ে হাসি ফুটেছিল স্থানীয় ক্রিকেটার ও ক্লাবের মধ্যে। সেই হাসি এখন বিষাদে রূপ নিয়েছে। তাদের একটাই দাবি অতি দ্রুত যেন লিগ শুরু করা হয়। তা না হলে স্থানীয় সব ক্রিকেটার ও ক্লাবগুলো সামনে আন্দোলনে নামা ছাড়া কোনো পথ নেই তাদের সামনে।

লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘গত বছর করোনার জন্য আমাদের লিগ বন্ধ ছিল। এই বছর লিগ শুরুর জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রস্তুতি চলমান। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আমাদের কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। আর সেখানেই লিগের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে ১৬টি দল নিয়ে টুর্নামেন্ট সাজানো হয়েছে। লিগ প্রস্তুতিতে মাঠের সংস্কারের কাজসহ আমাদের অনেক কাজই চলমান রয়েছে।’

লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট উপকমিটির আহ্বায়ক আহসানুল কবির রিপন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরা ডিসির সঙ্গে বসব সেখানে যেই সিদ্ধান্ত হবে সেই অনুযায়ী আমরা লিগ শুরুর কাজ শুরু করব। এখন শুধু ডিসির সম্মতির অপেক্ষায় আমরা। তার মধ্যে স্পন্সরের একটা ব্যাপার আছে। সেটার জন্যও আমরা একটু লেট করছি। তবে আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই লিগ শুরু হবে। লিগ শুরুর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন আমাদের। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।’

লক্ষ্মীপুর ক্রিকেটার্স অ্যাসোশিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক রিয়াজ মাহমুদ সুমন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে বিভিন্ন অযুহাতে লিগ হচ্ছে না। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে লিগের সূচি তৈরি হয়। কিন্তু এই পর্যন্তই শেষ। সব টিমের লাখ লাখ খরচ হলেও কোনো কাজে লাগছে না। ক্লাবের কোনো ফান্ড বা স্পন্সর নেই। তারা নিজেদের অর্থায়নে ক্লাবের খেলোয়াড়দের চালাতে হয়। অনেকে নিজেদের স্ত্রীর গহনা বিক্রি করেও ক্লাবের খরচ বহন করছে। এখন আমাদের দাবি অতি দ্রুত যেন লিগ শুরু করা হয়। বছরের পর বছর আর হতাশ হতে চাই না। লক্ষ্মীপুরের উদীয়মান ক্রিকেটারদের স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্ন হিসেবে দেখতে চাই না। প্রতিটি জেলা থেকে অনেকেই ঢাকা ফাস্ট ডিভিশনে ক্রিকেট খেলছে। সেই তুলনায় আমাদের জেলাতে অনেক কম ক্রিকেটারই ভালো স্থানে আছে।’

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
লিগ,লক্ষ্মীপুর
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close