জিয়াউদ্দিন রাজু

  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

দুর্দিনে দলের সাহসী নেতাদের মূল্যায়নের তাগিদ শেখ হাসিনার

নানা কারণে দলীয় রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েছেন, কিন্তু দুর্দিনে দলের সাহসী নেতা, আওয়ামী পরিবারের এমন সদস্যদের যোগ্য স্থানে মূল্যায়নের তাগাদা দিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বর্তমানে দলের জনবিচ্ছিন্ন সংসদ সদস্যদের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের যারা সম্ভাব্য প্রার্থী, তাদের আসনে কার কী অবস্থা, সেই বয়ান আছে আওয়ামী লীগ প্রধানের দপ্তরে।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা সূত্রে এসব কথা জানা গেছে।

সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদের পরিবারের সদস্যদের খুঁজে বের করে সামনে আনার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলের দুঃসময়ে তারা দলের জন্য নিরলসভাবে কাজ করেছেন। বিনিময়ে কিছুই চাননি দল থেকে। সেই পরীক্ষিত নেতাদের এবার পুরস্কৃত করবে আওয়ামী লীগ। নানা সময়ে দলের সুদিনের অনেকেই অনেক সুবিধা নিয়েছেন দল থেকে। বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে বা যোগ্য স্থানে দলের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে দুর্দিনের নেতাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের মূল্যায়ন করতে হবে বলে মনে করেন দলের শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনা। পুরোনো অনেক নেতাই বেঁচে নেই। কিন্তু তাদের সন্তান বা পরিবারের যারা রয়েছেন, তাদের বিষয়ে ভেবে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের পুরোনো অনেক নেতাকর্মী অবহেলিত। অনেকে মারা গেছেন। যারা আছেন, তাদের অনেক কারণে হয়তো তারা বা তাদের পরিবারের সদস্যরা দূরে সরে গেছেন। সামনে এগোতে পারেননি কিংবা রাজনীতি থেকে হারিয়ে গেছেন। তাদের এভাবে হারাতে দেওয়া যাবে না। তারা দলের দুঃসময়ের সাথী। তারা কোথায় আছেন, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অনেকের বাবা-মার একটা পুরোনো ইতিহাস আছে। তারা অনেকটা নীতিনিষ্ঠ হন। তারা সুযোগ পেলে নির্বাচনে দলের জন্য বড় সফলতা আনতে পারবেন। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।’

এদিকে নির্বাচনের জন্য নানা বিষয়ে ছক কষছে ক্ষমতাসীন দলটি। আসনে জনপ্রিয়তা এবং যোগ্যতার বৃত্তিতে দলীয় মনোনয়নের বিষয়েও আওয়ামী লীগ সভাপতি একাধিকবার জানিয়েছেন। তবে মঙ্গলবারও মনোনয়ন বোর্ডের সভায় বর্তমান এবং আগামীতে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের বিষয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা। ভিন্ন স্থানে দলের জনপ্রিয়তা বেশি থাকলেও নেতাদের জনপ্রিয়তা কম। নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় ভোটারদের দূরত্বের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে জরিপগুলো করা হয়েছে, সেখানে দেখা যায়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কিন্তু বিভিন্ন জেলা থেকে যখন নেতাদের জনপ্রিয়তার জরিপ করাই, সেখানে দেখা যায়, তাদের বেশির ভাগেরই জনপ্রিয়তা অনেক কম। এর কারণ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা কেন আরো বেশি ভোট ঘরে আনতে পারছি না, তা দেখতে হবে।’

সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, নির্বাচনের আগে নেত্রী এক ধরনের বার্তা দিয়েছেন। মনোনয়ন দেওয়ার জন্য যেসব নাম আসে, জরিপ রিপোর্টে দেখা যায়, তাদের জনপ্রিয়তা খুবই কম। তাহলে কি এরা জনগণের কাছে যায় না? সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে না? আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে এ ধরনের এমপি বা নেতাদের জরিপের ফিরিস্তি তুলে ধরে দল মনোনয়ন দেবে।

এদিকে দলীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি আসনের দলের বর্তমান এমপিদের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে। এর আগেই ওই অঞ্চলের বিরোধী দলের সম্ভাব্য যেসব এমপি প্রার্থী রয়েছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। একই সঙ্গে আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য যেসব প্রার্থী জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারবেন, এ ধরনের নেতাদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিরোধী দলে যেসব প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে লড়বেন, ওই প্রার্থীর কোয়ালিটি দেখে দলীয় এমপি নমিনেশন দেবে আওয়ামী লীগ। জরিপে জনসম্পৃক্ততা মিললে পাবেন দলীয় নমিনেশন, এর ব্যত্যয় ঘটলে বিকল্প প্রার্থী দেবে দল। এমনটাই নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
এবার গুরুত্ব পাবেন,দুর্দিনের নেতারা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close